মেসি জাদুর পর মার্তিনেজ রূপকথা, সেমি-ফাইনালে আর্জেন্টিনা
নাটকীয়তায় ভরপুর ম্যাচে টাইব্রেকারে নেদারল্যান্ডসকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে শেষ চারে উঠেছে আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট এবং অতিরিক্ত ৩০ মিনিট শেষে খেলা ২-২ গোলের সমতা থাকায় টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি ঘটে ম্যাচের।
মলিনা এবং মেসির গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর জয় সম্ভাব্যই মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনার। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে পরপর দুই গোল করে ডাচদের সমতায় ফেরান বদলি নামা ওয়েগোর্স্ট। এরপর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
সেখানেও কোনো গোল না হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ডাচদের প্রথম দুই শট ঠেকান এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। নিজেদের প্রথম তিন শটেই গোল করে আর্জেন্টিনা, এরপর ডাচরাও নিজেদের পরের তিন শটে গোল করে, তবে মিস করেন আর্জেন্টিনার এনজো ফার্নান্দেজ।
তাই ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত করার জন্য টাইব্রেকারের শেষ শট নিতে আসেন লাউতারো মার্টিনেজ, তার শট জালে জড়াতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় এবং সমর্থকেরা।
কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকে আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। তাদের আক্রমণাত্মক খেলার বিপরীতে কিছুটা খোলসের ভেতর ছিল ডাচরা।
সেই সুযোগেই ম্যাচে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে থাকে আলবিসেলেস্তেরা। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে লিওনেল মেসির রক্ষণ ভেদ করা দুর্দান্ত পাসে পায়ের পাতা ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মলিনা। ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
বিরতি থেকে ফিরে এসে একই ছন্দে খেলতে থাকেন মেসি-আলভারেজরা। কুলিয়ে উঠতে পারছিল না নেদারল্যান্ডস। ম্যাচের ৭২ মিনিটে আকুনাকে বক্সের ভেতর ফাউল করেন দুমফ্রাইস, পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
স্পটকিক থেকে দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছুঁয়ে ফেলেন মেসি।
ম্যাচের আর ১৫ মিনিট বাকি থাকতে যখন মনে হচ্ছিল সহজেই শেষ চারে পৌঁছাবে আলবিসেলেস্তেরা, ঠিক তখনই জেগে উঠে ডাচরা। ৮২ মিনিটে বদলি নামা ওয়েগোর্স্ট দুর্দান্ত হেডে ব্যবধান কমান, মাঠে নামার আগেই সাইডলাইন থেকে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন তিনি।
নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার পর ১০ মিনিট যোগ করেন ম্যাচ অফিশিয়ালরা। সেই সময়ও যখন শেষ তখনই আর্জেন্টিনার বক্সের সামনে পেজেল্লার করা ফাউলের জন্য ফ্রি-কিক পায় ডাচরা।
এই ফ্রি-কিকের আগেই আরেকটি ফ্রি-কিক এবং গোলের সুযোগ নষ্ট করেছিলেন বার্গুইস, এবারও শট নেওয়ার জন্য বলের পেছনে দাঁড়ান তিনি, কিন্তু সবাই যখন ভাবছে তিনি সরাসরি গোলমুখে মারবেন, বার্গুইস আলতো করে বল ঠেলে দিলেন ওয়েগোর্স্টের পায়ে, সেখানে সাথে থাকা ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে বল মার্তিনেজের বাম পাশ দিয়ে জালে পাঠান ওয়েগোর্স্ট, ২-২!
অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের প্রথমার্ধে দুই দলের ক্লান্ত ফুটবলে সুযোগ তৈরি হয় নি তেমন। কিন্তু শেষ ১০ মিনিটে আর্জেন্টিনার আক্রমণের ধারে মনে হচ্ছিল টাইব্রেকারে যেতে চায় না তারা। লাউতারো মার্তিনেজের শট ভ্যান ডাইকের বুকে লেগে বাইরে চলে যায়, এনজো ফার্নান্দেজের একটি শট ডাচ ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে গোলপোস্টের উপরের জালে আশ্রয়, ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে ফার্নান্দেজের আরেকটি শট বারে লেগে বাইরে যায়।
ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য টাইব্রেকারের শরণাপন্ন হতে হয়, সেখানে নায়ক বনে যান এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
সেমি-ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে বিদায় করে দেওয়া ক্রোয়েশিয়া।