‘সেকেন্ডের মধ্যে ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়লো ভবন’
তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তে গতকালকের ভূমিকম্পের তাণ্ডব থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমের কাছে তাদের সে সময়ের যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিনের শুরুতে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গাজিয়ানতেপে সিরিয়া সীমান্তের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। কয়েক ঘণ্টা পর একই দিনে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন আঘাত হানে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) মতে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে আঘাত হানে প্রথম ভূমিকম্পটি।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ নিহতের খবর এসেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখে ভীতিকর এ ভূমিকম্পের বর্ণনা উঠে এসেছে আরব নিউজের প্রতিবেদনে।
দিয়ারবাকিরের ওজকান কারাকোক বলেন, "নতুন বলে আমাদের ভবনে ভূমিকম্পের আঁচ সেভাবে লাগেনি। কিন্তু আমাদের স্কুলের পাশেই একটি আটতলা বিল্ডিংয়ে ২০০ লোকের বাস ছিল। সেকেন্ডের মধ্যে দেখলাম তা কাগজের টাওয়ারের মতো ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ল।"
"থামুন, এতো শক্তিশালী ভূমিকম্প, দয়া করে থামুন," এভাবেই ভিডিওতে চিৎকার শোনা গেছে তুর্কি তরুণী বার্জিনের। ভূমিকম্পের সময় তিনি ঘরের আলো এবং আসবাবপত্র কম্পনের ভিডিও ধারণ করছিলেন। পরে আতংকে মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেও ঘরের বাইরে ঠাঁই নেন বার্জিন।
২০১১ সালে সংঘটিত ভূমিকম্পে তুরস্কের যে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর এখনও সংস্কার হয়নি, তাদের একটি বার্জিনদের বাড়ি।
বেরাক ডেমিরেল নামের বেঁচে যাওয়া আরেকজন বলেন, "আমরা দীর্ঘসময় বাইরে ছিলাম, কিন্তু এতো বেশি ঠান্ডা পড়ছিল যে ঝুঁকি সত্ত্বেও বাড়িতে ফিরে আসি।"
হাতায় প্রদেশের বাসিন্দা মিসেল উয়ারের কাছ থেকে জানা যায়, ভূমিকম্পে সেখানকার একটি হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে গেছে, ভেতরে তখনো স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীরা ছিলেন।
গাজিয়ানতেপের রোমা সম্প্রদায়ের নাগরিক সমাজের কর্মী নিয়াজি বুলুটার গতকালের ভূমিকম্পে শিশুসহ ছয় আত্মীয়কে হারিয়েছেন।
বুলুটার বলেন, "আমাকে জানানো হয়েছে যে ভূমিকম্পে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরনো ভবনটি ধসে পড়ায় কিছু পরিবারের মৃত্যু হয়। এই জেলায় মূলত নিম্ন আয়ের মানুষের বাস ছিল।"
হাতায়স্পোর ফুটবল দলের কারিগরি পরিচালক ভলকান ডেমিরেল সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আবেগঘন ভিডিও পোস্ট করে মানবিক সহায়তার আবেদন করেছেন।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান গতকালই টুইট করে জানান, তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 'গভীরভাবে উদ্বিগ্ন'।
তিনি বলেন, "তুর্কি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানিয়েছি যে, আমরা তাদের যেকোনো ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।"
সোমবারের ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি দেশ তুরস্কের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। সতর্কতা হিসাবে সাউদার্ন সিহান রপ্তানি টার্মিনালে তেলের প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে তুরস্ক। এছাড়াও তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী ভূমিকম্প দুর্গত অঞ্চলে একটি বিমান সহায়তা করিডোর স্থাপন করেছে।
দেশটি ইতিমধ্যে লেভেল ৪ এলার্ট ঘোষণা করেছে এবং ইইউ-এর ইমার্জেন্সি রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহায়তার অনুরোধ করেছে। প্রত্যুত্তরে ৪৫টি দেশ অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।