আন্তর্জাতিক কন্টেইনার পরিবহনে ৬ জাহাজ কেনার প্রস্তাব শিপিং কর্পোরেশনের
তেল পরিবহনে ৪টি জাহাজ কেনার জন্য চীনের অর্থায়নের পর, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) এখন আরও ৬টি সেলুলার জাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে।
শিপিং কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ফ্রেইট কন্টেইনার পরিবহনের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা সেলুলার জাহাজগুলো প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুরে এবং পরে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্য পরিবহন করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য পরিবহনের জন্য বিদেশি জাহাজের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হওয়ায় ফ্রেইট চার্জ মেটাতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
বিদেশি জাহাজের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে আরও জাহাজ কেনা জরুরি বলে জানান শিপিং কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।
ইতোমধ্যে ছয়টি জাহাজ কেনার একটি প্রাথমিক প্রকল্প প্রস্তাব গত ৬ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। কমিশনের নীতিগত অনুমোদনের পর, বিদেশি ঋণ সংগ্রহের জন্য প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা।
এদিকে, তেল পরিবহনের জন্য মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চারটি জাহাজ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এরমধ্যে দুটি হলো- ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাঙ্কার এবং দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া টিবিএসকে বলেন, জি-টু-জি ভিত্তিতে চীনের অর্থায়নে চার জাহাজ কেনার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
বর্তমানে শিপিং কর্পোরেশনের ০.৩০ মিলিয়ন টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৮ জাহাজের একটি বহর রয়েছে। বহরে ৩টি বাল্ক ক্যারিয়ার, ৩টি পুরানো রাসায়নিক ট্যাঙ্কার এবং ২টি লাইটার জাহাজ রয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি সমুদ্রপথেই হয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক শিপিং বাণিজ্যে গত তিন দশক ধরে কন্টেইনারাইজড কার্গো চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে; এই ধারা আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশে কন্টেইনারাইজড কার্গো পরিবহন বৃদ্ধি পেতে থাকলে, এরসঙ্গে তাল মিলিয়ে ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম-সিঙ্গাপুর রুটে একটি কন্টেইনার ফিডার সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।
কর্মকর্তারা জানান, সেসময় বাংলার রবি, বাংলার মনি ও বাংলার শিখা নামে তিনটি জাহাজ ওই পরিষেবায় নিয়োজিত ছিল। এরমধ্যে, বাংলার শিখা ছিল একমাত্র কন্টেইনার জাহাজ; আর বাংলার রবি এবং বাংলার মনি ছিল বহুমুখী জাহাজ- এই দুই জাহাজ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়, যেমন- সাধারণ কার্গো, কনটেইনারাইজড কার্গো, ব্রেক-বাল্ক ইত্যাদি।
৬ জাহাজ থেকে বার্ষিক আয় হবে ২,২৬১ কোটি টাকা
শিপিং কর্পোরেশন জানিয়েছে, কেনার জন্য প্রস্তাবিত সেলুলার জাহাজগুলো প্রাথমিকভাবে প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ টিইইউএস (বিশ-ফুট সমতুল্য ইউনিট) কন্টেইনারাইজড কার্গো পরিবহন করবে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, জাহাজ থেকে বার্ষিক আয় হবে ২,২৬১.১৫ কোটি টাকা এবং জাহাজের বার্ষিক পরিচালন ব্যয় হবে ১,২১৫.১১ কোটি টাকা।
৬ জাহাজ কেনা প্রকল্পে ব্যাংক চার্জ, জাহাজের নিবন্ধন, ক্রেতার সার্ভেয়ার ফি, ট্যাক্স ও ভ্যাট এবং লজিস্টিকসহ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩,৮৩৬.৮৩ কোটি টাকা (৩৫৮.৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৯২ শতাংশ বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে অর্থায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
৪ তেলবাহী জাহাজ কিনতে চীন দেবে ২,৪৮৬ কোটি টাকা
চারটি তেলবাহী জাহাজ সংগ্রহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২,৬২০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ঋণ হিসেবে চীনের কাছ থেকে পাওয়া যাবে ২,৪৮৬ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৯৫ শতাংশ।
প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি ১.১৪ লাখ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্কার এবং প্রতিটি ৮০,০০০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার সংগ্রহ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের রূপকল্প ২০৪১-কে সামনে রেখে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তেল আমদানির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সুশৃঙ্খলভাবে অপরিশোধিত তেল এবং পরিশোধিত পণ্য আমদানির জন্য 'ইনস্টলেশন অফ সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন' নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অপরিশোধিত তেল ও পরিশোধিত পণ্য জাহাজে করে সরাসরি বঙ্গোপসাগর থেকে ডিপোতে স্থানান্তর করা হবে। চলতি অর্থবছরেই এ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।