আকুর বিল পরিশোধের পর ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামবে রিজার্ভ
বাংলাদেশ ব্যাংক এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (আকু) ১.১৮ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করার পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে আসবে ২৯ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বুধবার বিকেলে একটি সুইফট বার্তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে আকু পেমেন্ট প্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন দিয়েছে।
"আগামী সোমবারের মধ্যে আকু পেমেন্ট প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রমজান এবং ঈদুল ফিতরের মধ্যে আমদানি বাড়ার কারণে পেমেন্ট বেড়েছে, যদিও গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় এটি কমেছে," যোগ করেন তিনি।
আঞ্চলিক আমদানির ক্ষেত্রে নয়টি সদস্য দেশ - বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার আর্থিক লেনদেন কভার করে আকু পেমেন্ট গেটওয়ে। প্রতি দুই মাস অন্তর বিল পরিশোধ করা হয়।
মার্চের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক আকুর ১.০৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে, যার ফলে রিজার্ভ ৩১.১৫ বিলিয়নে নেমে আসে। চলমান পরিশোধ প্রক্রিয়া শেষে রিজার্ভ প্রায় ২৯.৮ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২ মে রিজার্ভ ছিল ৩০.৯৮ বিলিয়ন ডলার।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের রিজার্ভ রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এরপর করোনার বিধিনিষেধ শেষে আমদানি বাড়তে থাকায় এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমতে থাকায় রিজার্ভও নামতে থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, "২০২২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুব দ্রুত কমেছে, কিন্তু এ বছরের শুরুর দিকে তা ধীরগতিতে কমছে। তারপরও রিজার্ভ যেহেতু ৩০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে, একে নেতিবাচক বলে ধরা যাচ্ছে না।"
"সামনে রিজার্ভ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহার আগে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রেমিট্যান্স ও রপ্তানির জন্য ডলারের হার ধীরে ধীরে বাড়াচ্ছে," টিবিএসকে বলেন তিনি।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আইএমএফ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপানের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ঋণ রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়াবে।
বিশেষজ্ঞরা সবসময় সুপারিশ করেন যে একটি দেশের অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য রিজার্ভ থাকা উচিত। বর্তমান গ্রস রিজার্ভের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ মাসের ব্যয় মেটানোর ক্ষমতা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশকে অবশ্য মোট রিজার্ভ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে।
সেক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেট রিজার্ভ ২১.৮ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি হবে, যার মাধ্যমে চার মাসের জন্য আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব।
এদিকে, স্ট্যান্ডার্ড ফরেইন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ বজায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সরকার গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়; যার ফলে কমে আসে লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলার হার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) এলসি খোলার পরিমাণ প্রায় ২৫% কমে ৬৮.৮৪ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ৫১.৩৬ বিলিয়ন ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "যদিও আমাদের আমদানি ২০২৩ অর্থবছরে কমেছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের অতিরিক্ত আমদানি বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস কমে যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রধান বাজারগুলোতে পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় গত মাসে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ১৬.৫২% কমেছে।
দেশটির রপ্তানি খাত ওই মাসে ৩.৯৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ে ছিল ৪.৭৩ বিলিয়ন ডলার। ডলারের রেট কম থাকায় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স ১৯.৪৪% কমে ১.৬৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে নেট ফরেইন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) ৩৫.৫৬% কমেছে।