ভারতে ৮ চিতার মৃত্যুর পর বন্যপ্রাণী কর্মকর্তাকে অপসারণ
ভারতের কুনো জাতীয় উদ্যানে গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) অষ্টম চিতার মৃত্যুর পর শীর্ষ পর্যায়ের এক বন্যপ্রাণী কর্মকর্তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতে চিতা পুনঃপ্রবর্তন নিয়ে সরকারিভাবে যে হাই-প্রোফাইল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, পরপর আটটি চিতার মৃত্যুর পর তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে চিতা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় ১৯৫২ সালে। ভারতে চিতা ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নামিবিয়া থেকে আটটি (পাঁচটি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী) চিতা আনা হয়। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয় আরও ১২টি চিতা। প্রথম দফায় আনা চিতাগুলোকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেন।
এরপর গত চার মাসে ভারতে ভারতে আটটি চিতার মৃত্যু হয়েছে এবং বন্যপ্রাণী কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাকৃতিক কারণে চিতাগুলোর মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু সর্বশেষ অষ্টম চিতা মারা যাওয়ার পর সোমবার জাসবির সিং চৌহান নামের এক বন্যপ্রাণী কর্মকর্তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয় সরকারি বন বিভাগ। তবে তাকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে কোনো কারণ জানায়নি বন বিভাগ।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিতাগুলোর মৃত্যুর কারণেই এই কর্মকর্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে তারা জানিয়েছে, এ প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, মারা যাওয়া আটটি চিতার মধ্যে পাঁচটিই ছিল অন্য দেশ থেকে আনা চিতা। আর বাকিগুলো ছিল ভারতে আনা চিতাগুলো থেকে জন্ম নেওয়া চারটি শাবকের মধ্যে তিনটি।
গেল রবিবার ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, এখনই এই প্রকল্পকে 'সফল বা ব্যর্থ' বলে দেওয়ার সময় আসেনি, যেহেতু 'বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই প্রাণীটির পুনঃপ্রবর্তন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প।'
তারা আরও জানায় যে, বৈশ্বিক এবং বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা গিয়েছে যে প্রাথমিক পর্যায়ে পুনঃপ্রবর্তন করা প্রাণীগুলোর ৫০ শতাংশই মারা যায়।
কিন্তু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবাদী প্রবীণ ভার্গব মঙ্গলবার এএফপিকে বলেন, যেহেতু অনেক মৌলিক বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে তাই ভারতে চিতা পুনঃপ্রবর্তন প্রকল্প ব্যর্থ হবারই কথা ছিল। তার ভাষ্যে, "আমার ধারণা, কোনো কোনো আমলা ও বিশেষজ্ঞরা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন। চিতার জন্য প্রয়োজনীয় সুবিশাল তৃণভূমি আমাদের নেই কিংবা এ ধরনের একটি জটিল পুনঃপ্রবর্তন প্রকল্প চালুর জন্য অন্যান্য যে বাস্তুসংস্থানগত প্রক্রিয়া প্রয়োজন, সেটিও নেই। এই প্রকল্প খবরের শিরোনাম হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এবার ৮টি চিতার মৃত্যুর পর এর কঠিন বাস্তবতা আমাদের সামনে ধরা পড়ছে।"
হতাশাজনক শুরু
ওয়াইল্ডলাইফ ও স্ট্যাটিসটিক্যাল পরিবেশবিদ অর্জুন গোপানস্বামী বৃহদাকার মাংসাশী প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি মনে করেন, চিতাগুলোর মৃত্যুর কারণ নিয়ে আরও স্বচ্ছতার প্রয়োজন ছিল।
কোনো কোনো গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, চিতাগুলোর গলায় রেডিও ট্র্যাকিং কলার থেকে ইনফেকশনের ফলে কিছু চিতার মৃত্যু হতে পারে।
গোপালস্বামী এএফপিকে বলেন, 'এই প্রকল্পের শুরুটাই ছিল হতাশাজনক, যেখানে আটটির মধ্যে সাতটি চিতারই মৃত্যু হয়েছে সংরক্ষিত স্থানে, যেখানে এরকম ঘটনা সবচেয়ে কম ঘটার কথা'।
এর আগে নামিবিয়ার লিবনিজ-আইজেডডব্লিউর চিতা রিসার্চ প্রজেক্ট এর বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, ভারতের চিতা ফিরিয়ে আনার প্রোগ্রামে 'স্থান-সংক্রান্ত বাস্তুসংস্থান' এর বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে, যেহেতু সাধারণত চিতা যেমন পরিবেশে থাকে, তার তুলনায় কুনো উদ্যান অনেক ছোট।