আন্দোলন রাস্তায়ই হবে, বাধা এলে প্রতিরোধ হবে: বিএনপি নেতারা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে আজ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতারা।
বিএনপি নেতারা বলেছেন, সরকারের পতন ঘটিয়েই ঘরে ফিরবেন তারা, অতীতের মতো হামলা করে এবার আর তাদের আন্দোলন দমানো যাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'আন্দোলনের প্রস্তুতি আছে, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।'
মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসমাবেশে বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন। বিএনপির শনিবারের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে এ জনসমাবেশের আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা বিএনপি।
আমীর খসরু বলেন, 'সারা পৃথিবীর মানুষ অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে রাস্তায় নেমে। রাস্তায় নামা অসাংবিধানিক, বেআইনি নয়। আন্দোলন রাস্তায়ই হবে, কোনো বাধা এলে লড়াই হবে, প্রতিরোধ হবে।'
তারেক রহমানের বক্তব্যের ওপর ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে খসরু বলেন, 'বাংলাদেশের নেতৃত্ব কে দেবে, সেটা আদালত, প্রশাসন বা সরকারি কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে হবে না। তারেক রহমানের ব্যাপারে গত ২৮ তারিখ বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা তারেক রহমানের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে।'
জনসমাবেশে বিএনপি নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে চলমান আন্দোলনকে দমাতে চেয়েছে। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তারা কৌশল বদলে রাজপথে মোকাবিলা করবেন এবং সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরবেন বলে জানান।
জনসমাবেশ শুরু হওয়ার পর বক্তব্য দেন বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম এবং সঞ্চালনা করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তার বক্তব্যে বলেন, 'দেশে যখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে মানুষ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে, তখন আওয়ামী লীগ ইয়াহিয়া ও টিক্কা খানের মতো শান্তি কমিটি গঠন করেছে।'
তিনি বলেন, 'আমরা যখন কর্মসূচি ঘোষণা করছি, ওরা আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। সেই কর্মসূচিতে আমাদের নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুবদলের সাজিদ হাসান বাবুর ওপর রক্তাক্ত হামলা করেছে। আমানউল্লাহ আমানকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেছে।'
রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতেও পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা ও সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে অনেক নেতা-কর্মীকে আহত ও গ্রেপ্তার করেছে। তারা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি কিভাবে বানচাল করা যায় সেভাবেই পরিকল্পনা করেছিলো। আসলে আমাদের কর্মসূচি বানচাল করতে গিয়ে নিজেরাই বানচাল হয়ে গেছে। তারা এখন গায়েবি মামলা দিচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'পুলিশ আমাদেরকে একটি শর্ত দিয়েছে—কোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যাক্তির বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। কারণ সারা দেশের মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করছেন সেই তারেক রহমান। সেজন্যই তার বক্তব্য প্রচার না করার শর্ত দিয়েছে।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন,'গত ২৯ তারিখ নারকীয় ঘটনা আমরা আইয়ুব খান-ইয়াহিয়া খানের সময়ও ঘটেনি!'
তিনি বলেন, 'গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে সাপের মতো মারা হয়েছে, সাপকেও মানুষ এভাবে মারে না। আমাদের সব নেতাদের গ্রেপ্তার করলে, পিটালেও আপনাদের পতন ঠেকানো যাবে ন। নমরুদ,ফেরাউনও পতন ঠেকাতে পারেনি,আপনারাও পারবেন না।'
বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, 'যেকোনো সময় ঢাকাসহ পুরো দেশ অবরোধ করা হবে। সরকারের পতন ঘটিয়েই ঘরে ফিরে যাব।'
বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে রক্তপাত ঘটানো হয়েছে। হামলা করে মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। সরকারের পতনের আগে কেউ ঘরে ফিরে যাবে না।