ব্রিটিশ মিউজিয়ামে চুরি যাওয়া ৬৩ হাজার ডলার দামের জুয়েলারির অনলাইন মূল্য ৫০ ডলার!
চুরির দায়ে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামের এক কিউরেটরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মূলত জুয়েলারি আইটেম চুরি করে সেগুলো নামমাত্র দামে অনলাইনে বিক্রির জন্য তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
টেলিগ্রাফের রিপোর্ট অনুযায়ী, চুরি হওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে কিছু পণ্যের দাম প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৬৩ হাজার ডলার সমমূল্যের। তবে সেগুলো বিক্রির জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইবে ডট কমে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ ডলার পর্যন্ত দাম হাঁকানো হয়েছিল।
২০১৩ সালেই একজন পুরাকীর্তি বিশেষজ্ঞ সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে, কোনো স্টাফ ব্রিটিশ মিউজিয়ামের নিরাপদ ভল্ট থেকে জিনিসপত্র চুরি করছে। এই সন্দেহের তিন বছর পর জাদুঘরের কিছু পণ্য ইবে প্ল্যাটফর্মে বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে বলে খোঁজ পাওয়া যায়।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ভূমধ্যসাগরীয় সংস্কৃতি বিষয়ক কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন পিটার হিগস। সম্প্রতি ৫৬ বছর বয়সী এই কিউরেটরকেই অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর চুরির অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তবে হিগসের ২১ বছর বয়সী ছেলে গ্রেগের দাবি, তার বাবা নির্দোষ। তিনি বলেন, "আমার বাবা কিছুই করেননি। তিনি বিষয়টি নিয়ে একদমই খুশি নন। বাবা নিজের চাকরি ও সম্মান; দুটোই হারিয়েছেন। আমি মনে করি, তার সাথে এটা ঠিক করা হয়নি।"
অন্যদিকে গত বুধবার জাদুঘর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোনা, মূল্যবান পাথর ও কাচ দিয়ে তৈরি নানা রকমের জুয়েলারি চুরি হয়েছে। এগুলো খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১৯০০ শতকের মধ্যেকার সময়কালের ঐতিহাসিক বস্তু।
চুরি হওয়া জুয়েলারির মধ্যে ছিল প্রাচীন রোমান আমলের একটি গহনা। একজন ডিলারের আন্দাজ মোতাবেক, গহনাটির বাজারদর ২৫ হাজার ডলার থেকে ৬৩ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তবে ২০১৬ সালে পণ্যটি মাত্র ৪০ থেকে ৫০ ডলারে বিক্রির জন্য সেগুলো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তোলা হয়েছিল।
বর্তমানে পুলিশ চুরির ঘটনাটি তদন্ত করছে। টেলিগ্রাফের রিপোর্ট অনুযায়ী, জাদুঘরটিতে প্রায় ৮০ লাখ ঐতিহাসিক বস্তু সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু এই বস্তুগুলো ঠিকভাবে ক্যাটালগ আকারে না থাকায় চুরির ঘটনা সনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রোমান আর্ট বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মার্টিন হেনিগ বলেন, "জাদুঘরটিতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রগুলোর ক্যাটালগ করা হয়। কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রের ক্যাটালগ করা হয় না। আবার কিছু জিনিসপত্র একসাথে করে রাখা হয়েছে।"
ঘটনাটি ইতোমধ্যেই একটি স্বাধীন রিভিউ কমিটির অধীনে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কমিটি ঠিক কোন কোন জিনিস চুরি হয়েছে সেটি খুঁজে বের করা, চুরি হওয়া জিনিসপত্রগুলি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা এবং ভবিষ্যতে অনুরূপ চুরি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণে কাজ করছে।
এ সম্পর্কে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের এক মুখপাত্র বলেন, "আমরা ঘটনাটি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত পরিচালনা করেছি। যে ব্যক্তি দায়ী বলে তদন্তে বের হয়ে এসেছে, সেই ব্যক্তিকে ইতোমধ্যেই বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসাথে এটি ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে আমরা আরও জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছি। চুরির ঘটনাটি এখন একটি ফৌজদারি তদন্তের বিষয়। তাই আমরা এরচেয়ে বেশি মন্তব্য করতে পারবো না।"