'অবৈধ কর্মকাণ্ডের' অভিযোগে মার্কিন দূতাবাসের দুই কূটনীতিককে বহিষ্কার করল রাশিয়া
'অবৈধ কর্মকাণ্ডে' জড়িত থাকার অভিযোগে মার্কিন দূতাবাসের দুই কূটনীতিককে দেশ থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, রুশ সরকার ইস্যুটিকে ঘিরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন ট্রেসিকে তলব করেছিল। সেখানে দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি জেফরি সিলিন এবং সেকেন্ড সেক্রেটারি ডেভিড বার্নস্টেইনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে। একইসাথে এই দুই কূটনীতিককে আগামী সাতদিনের মধ্যে রাশিয়া ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয় রুশ নাগরিক রবার্ট শোনোভ একটি বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে 'গোপনীয় সহযোগিতার' দায়ে অভিযুক্ত। আর মার্কিন দুই কূটনীতিক তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। ফলে তারা একজন কূটনীতিক হিসেবে অবৈধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন।
অন্যদিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই মার্কিন কূটনীতিককে বিনা উস্কানিতে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে রাশিয়া। ওয়াশিংটন এই ঘটনার যথাযথ জবাব দেবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, "আমাদের দূতাবাসের কূটনীতিকদের বিনা কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাশিয়া এবারও গঠনমূলক কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিপরীতে সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। দেশটি আমাদের দূতাবাসের কর্মীদের হয়রানি করছে, ঠিক যেমন এটি তার নিজস্ব নাগরিকদের ভয় দেখাতে করে থাকে।"
ম্যাথু মিলার আরও বলেন, "রাশিয়া হয়রানির পথ বেঁছে নেওয়ায় আমরা নিন্দা জানাই। একইসাথে আপনারা এটা অবশ্যই আশা করতে পারেন যে, আমরা রাশিয়ার এমন কর্মকাণ্ডের যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানাব।"
রবার্ট শোনোভ ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর ভ্লাদিভোস্টকে মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেল কর্তৃক নিযুক্ত ছিলেন। তবে ২০২১ সালে রাশিয়া মার্কিন মিশনের সকল স্থানীয় কর্মীদের বরখাস্তের আদেশ দেয়।
গত আগস্ট মাসে রাশিয়ার এফএসবি সিকুউরিটি সার্ভিস শোনোভের একটি স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও প্রকাশ করে। ঐ ভিডিওতে শোনোভ জানান, মার্কিন কূটনীতিক সিলিন ও বার্নস্টেইন তাকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার কর্মকাণ্ড, নতুন এলাকা দখল এবং ২০২৪ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ দিয়েছিলেন।
স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিওতে শোনোভ আরও জানান, তাকে ইস্যুগুলির উপর 'নেতিবাচক' তথ্য সংগ্রহ করতে এবং প্রতিবেদনে সেগুলো তুলে ধরতে বলা হয়েছিল।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শোনোভের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য জানানোর পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। একইসাথে মস্কো মার্কিন কর্মীদের ভয় দেখানো ও হয়রানির চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
গত মে মাসে শোনেভকে গ্রেফতার করা হয়। তখন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, "ঘটনাটির মাধ্যমে রাশিয়ার নিজেদের নাগরিকদের বিরুদ্ধে 'ক্রমবর্ধমান দমনমূলক আইনের নির্লজ্জ ব্যবহার' এর বিষয়টি উঠে এসেছে। কেননা যথাযথ প্রমাণ ছাড়াই শোনোভের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি আনা হয়েছে।"
অন্যদিকে রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, "শোনোভকে রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা বিনষ্ট করতে অর্থ প্রদান করা হয়েছিল।" একইসাথে মার্কিন কূটনৈতিক মিশনের অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ড দৃঢ়ভাবে দমন করার কথাও বলা হয়।
মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার কূটনীতিক সম্পর্ক ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তলানিতে অবস্থান করছে। যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করছে। একইসাথে ইউক্রেনে আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে মস্কোর ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।