শ্রমিক বিক্ষোভ: আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে স্প্লিন্টারে আহত অন্তত ৩ জন
তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আশুলিয়ায় চলমান শ্রমিক আন্দোলনের ৭ম দিনে আজ (৪ নভেম্বর) সকাল থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু করেছে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের ছোঁড়া স্প্লিন্টার বা ছররা গুলিতে আহত হয়েছে অন্তত তিন জন।
রোববার (৪ নভেম্বর) সকালে আশুলিয়ার জামগড়া-ছয়তলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এলাকাটির বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কারখানায় প্রবেশ করলেও কারখানায় কাজ না করে হাজিরা কার্ড পাঞ্চ করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যায়।
পরে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শ্রমিকরা জামগড়া-ছয়তলা এলাকার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
এক পর্যায়ে শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে নেমে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে ও বিভিন্ন কারখানার সামনে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ ধাওয়া দেওয়ার পাশাপাশি টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এসময় স্প্লিন্টার বা ছররা গুলিতে আমিরুল ইসলাম, শামীম মিয়া ও তাইজুদ্দিন ইসলাম নামে তিনজন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ড. জয় ভট্টাচার্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, আমরা সকাল থেকে মোট ৩ জন স্প্লিন্টার ইনজুরির পেশেন্ট পেয়েছি। তাদের মধ্যে একজনকে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাকি দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।"
যদিও পুলিশ বলছে, এমন কোন খবর তাদের কাছে নেই।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আমিরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাইপাইল থেকে ট্রিপ নিয়ে ছয়তলায় এসেছিলাম। ফেরার পথে দুই পক্ষের মাঝে পড়ে যাই। এসময় পুলিশ গুলি শুরু করলে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে।"
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, "বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কে নেমে সড়ক অবরোধ ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে আমরা তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেই। আপাতত এই এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত আছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।"
গুলিবিদ্ধদের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, "আমরা কিছু রাবার বুলেট ছুড়েছি, কিন্তু কাউকে লক্ষ্য করে নয়। এমন কোন সংবাদ আমার জানা নেই।"
এই রিপোর্ট লেখার সময় বেলা ১১টা নাগাদ আশুলিয়ার বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, নিশ্চিন্তপুর, নরসিংহপূরসহ আশেপাশের এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, সকাল থেকেই টঙ্গী, বোর্ডবাজার, গাজীপুর চৌরাস্তা, মৌচাক, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, মাওয়ায় সব কারখানা চলছে। একইসাথে রাজধানীর মিরপুরসহ পুরো ডিএমপি এলাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কারখানাগুলোও চলছে।
এসব এলাকায় এখন পর্যন্ত শ্রমিক অসন্তোষের কোনো ঘটনা ঘটেনি।