সাফারি পার্কের দলছুট হাতি শাবকটির অবস্থার উন্নতি — খাচ্ছে, ছোটাছুটি করছে!
চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার পাইরাং বন থেকে দলছুট হয়ে লোকালয়ে চলে আসার পর কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নিয়ে যাওয়া হাতি শাবকটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
চরম অপুষ্টিতে ভুগে দূর্বল হয়ে পড়া হাতির বাচ্চাটির দুধপান ও ছোটাছুটির পরিমাণও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সাফারি পার্ক হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ড. জুলকারনাইন।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'হাতির বাচ্চাটিকে এখানে আনার সময় অবস্থা বেশ নাজুক ছিল। এটির শরীরে বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষত ছিল। দীর্ঘদিন মায়ের দুধ না পেয়ে চরম অপুষ্টিতে ভুগে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।'
তিনি জানান, সাফারি পার্কের হাসপাতালে একটি বিশেষ কক্ষে রেখে দুজন অভিজ্ঞ মাহুতের তত্ত্বাবধানে শাবকটির নিবিড় পরিচর্যা ও চিকিৎসা শুরু হয়। গত তিন সপ্তাহের পরিচর্যায় এটির শারীরিক অবস্থার লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে।
বাচ্চাটিকে বর্তমানে হাসপাতালকক্ষ থেকে বের করে নিয়মিত বাইরে হাঁটতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে তার চাঞ্চল্য বাড়ছে।
তবে শাবকটির শরীরের ক্ষতগুলো এখনো ভালোমতো শুকায়নি। 'হাসপাতালকক্ষের দেয়াল ও গ্রিলের সঙ্গে জোরে ধাক্কা দিয়ে এটি নতুন কিছু আঘাত পেয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত তার ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করছি,' বলেন ড. জুলকারনাইন।
তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছাড়া হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. জুলকারনাইন বলেন, 'তার বয়স এখন খুবই কম। মায়ের সঙ্গে বন্য পরিবেশে থাকা আর একা থাকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাকে এখনই বন্য পরিবেশে ছাড়া হলে সে মানিয়ে নিতে পারবে না।'
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, শুরুতে বাচ্চাটিকে দিনে এক কেজি দুধও খাওয়ানো যেত না। এখন এটি দিনে তিন কেজি দুধ খাচ্ছে।
'হাতির বাচ্চা চার বছর বয়স পর্যন্ত দুধ খায়। দিন দিন বাচ্চার দুধ খাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। আমাদের একটি দলছুট হাতির বাচ্চা বড় করার অভিজ্ঞতা আছে। প্রতি মাসে তার জন্য প্রায় এক লাখ টাকার দুধের প্রয়োজন হতো,' মাজহারুল ইসলাম বলেন।
এর আগে গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পাইরাং বনে কাদায় আটকে পড়লে শাবকটিকে উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দেওয়ার পর এটি আবার লোকালয়ে চলে আসে। এরপর বন বিভাগের কর্মীরা শাবকটিকে হাতির পালের কাছে ফিরিয়ে দিতে কয়েক দফা চেষ্টা করেন। তবে মানুষের সংস্পর্শে আসায় হাতির পাল শাবকটিকে না নিয়ে চলে যায়।
দীর্ঘসময় মায়ের দুধের অভাবে শাবকটি দুর্বল হতে থাকায় ২০ অক্টোবর রাতে এটিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে পাঠানো হয়।