হার দিয়েই শেষ হলো বাংলাদেশের হতাশার বিশ্বকাপ যাত্রা
জয়ে শুরুর পর টানা হার, কয়েক ম্যাচ পরই সেমি-ফাইনাল খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। টানা চার হারের পরও অবশ্য শেষ চারের আশা ছাড়েনি দলটি। কিন্তু এরপরও সেই ব্যর্থতার গল্পই লিখতে থাকে সাকিব আল হাসানের দল। শেষমেষ লক্ষ্য দাঁড়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আজকের ম্যাচটি জিতলেই মিলে যেত টিকেট। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ৩০০ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়েও জয়ের মুখ দেখা হলো না তাদের, পূরণ হলো না লক্ষ্যও।
শনিবার বিশ্বকাপে নিজেদের নবম ও শেষ ম্যাচে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এবারের বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে এটা বাংলাদেশের ৭ হার। শেষ পাঁচ বিশ্বকাপের মধ্যে এবারই সবচেয়ে হতাশার পারফরম্যান্স করলো তারা। আগের চারটি বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ তিনটি করে ম্যাচ জেতে, এবার দুই জয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো।
এই হারে ঝুলে থাকলো বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভাগ্য। ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় আসরটিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবারের বিশ্বকাপে সেরা আটে থাকতে হবে তাদের। কিন্তু এই হারে সেটা হলো না। কাল ভারতের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডস হারলেই কেবল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকেট পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু ডাচরা জিতলে বা ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে তারা সেরা আটের মধ্যে জায়গা পেয়ে যাবে। দুই জয়ে বাংলাদেশের সমান চার পয়েন্ট তাদের।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ৩০৬ রান তোলে। এদিন দলটির প্রায় সবাই রানের দেখা পেয়েছেন। ব্যাটিং করা ১০ জনের ৭ জনই ২০-এর বেশি রান করেছেন, তাওহিদ হৃদয় করেন হাফ সেঞ্চুরি। সেট দুজন ব্যাটসম্যান রান আউট না হলে সংগ্রহটা আরও বড় হতে পারতো। এবারের বিশ্বকাপে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
জবাবে মিচেল মার্শের অসাধারণ সেঞ্চুরি এবং ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথের হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৪.৪ ওভারে ২ উইকেট হারিয়েই জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে এটাই তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া। বিশ্ব আসরে প্রথমবারের মতো ৩০০ ছাড়ানো লক্ষ্য পাড়ি দেওয়া পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের আগের সর্বোচ্চ রান তাড়া ২৯২, সর্বশেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালো ছিল না। দলীয় ১২ রানেই ফিরে যান ট্রভিস হেড। বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদের ব্যাক অলেংথের ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে ইনসাইডজ এজে বোল্ড হন ১১ বলে ১০ রান করা অজি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। শুরুর চাপ কাটিয়ে উঠতে অবশ্য সময়ই লাগেনি অজিদের। জুটি গড়ে সাবলীল ব্যাটিং করতে শুরু করেন মার্শ এবং ওয়ার্নার।
দ্বিতীয় উইকেটে ১১৬ বলে ১২০ রানের জুটি গড়েন তারা। এর মাঝে দুজনই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে নিজের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি করা ওয়ার্নার ৬১ বলে ৬টি চারে ৫৩ রান করে আউট হলেও মার্শ দাুপটে ব্যাটিংই জারি রাখেন। স্টিভ স্মিথের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ার পথে ডানহাতি এই ওপেনার তুলে নেন এবারের বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
বাংলাদেশের বোলারদের কোণঠাসা করে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করা মার্শ শেষ পর্যন্ত ১৩২ বলে ১৭টি চার ও ৯টি ছক্কায় ১৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন। বিশ্বকাপ এবং ওয়ানডেত এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। বিশ্বকাপে অজি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার ইনিংসটি তৃতীয় সেরা। বিশ্বকাপে দশম হাফ সেঞ্চুরি করা স্মিথ ৬৪ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন। এই দুই ব্যাটসম্যান তৃতীয় উইকেটে ১৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। বাংলাদেশের তাসকিন ও মুস্তাফিজ একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ ভালোই শুরু করে। উদ্বোধনী জুটিতে ১১.২ ওভারে ৭৬ রান যোগ করেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন কুমার দাস। পুরো আসরে অনুজ্জ্বল থেকে যাওয়া তরুণ বাঁহাতি ওপেনার সাবলীল ব্যাটিং-ই করছিলেন আজ। কিন্তু শন অ্যাবটের লাফিয়ে ওঠা বলে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে বিদায় নেন ৩৪ বলে ৬টি চারে ৩৬ রান করা তানজিদ তামিম।
আর কিছুক্ষণ ব্যাটিং করা লিটনও ৩৬ রান করেন। ৪৫ বলে ইনিংসে ৫টি চার মারা ডানহাতি এই ওপেনার অ্যাডাম জ্যাম্পার বলে মার্নাস লাবুশেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে থামেন। এরপর জুটি গড়ে তোলেন সাকিব আল হাসানের অবর্তমানে নেতৃত্ব পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত ও ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি হওয়া তাওহিদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে ৬৩ রান যোগ করেন এ দুজন।
শান্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হলে এই জুটি ভাঙে। দুই রান নিতে গিয়ে লাফিয়েও পূর্ণ করতে পারেননি শান্ত। ৫৭ বলে ৬টি চারে ৪৫ রান করে আউট হন তিনি। তিন নম্বর উইকেট হারিয়েও অবশ্য চাপে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। হৃদয়ের সঙ্গে যোগ দিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের ইনিংসটি আরও বড় হতে পারতো। কিন্তু তিনিও রান আউট হয়ে ফেরেন। ২৮ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩২ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। এবারের বিশ্বকাপে ৭ ইনিংসে একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিসহ ৫৫.৬৬ গড়ে ৩২৮ রান করেছেন তিনি, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ বিশ্বকাপে তার জায়গা পাওয়া নিয়েই ছিল সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তা।
ভালো শুরু করেও মুশফিকুর রহিম বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেননি। ২৪ বলে একটি ছক্কায় ২১ রান করেন অভিজ্ঞ ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৪৭তম ওভারে আউট হন বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা হৃদয়। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৭৯ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৪ রান করেন, বিশ্বকাপে এই তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে ৩০০ ছাড়ায় বাংলাদেশ। ২০ বলে ৪টি চারে ২৯ রান করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার শন অ্যাবট ও অ্যাডাম জ্যাম্পা ২টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট পান মার্কাস স্টয়নিস।