আইএমএফ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে যে ১০ দেশ
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়ছে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। ২০২২ সালে দেশটি ফুটবল বিশ্বকাপ জেতার পর ধারণা করা হয়েছিল অর্থনীতিতে কিছুটা গতি আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি।
বিশ্বকাপের সঙ্গে আর্জেন্টিনার অর্থনীতির একটি সহসম্পর্কের কথা বেশ প্রচলিত। ম্যারাডোনা যখন ১৯৮৬ সালের শিরোপা জয় করেন, তখনও দেশটির মুদ্রাস্ফীতি ছিল গড়ে ১১৬ শতাংশ। ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনকারী দেশ হিসেবে আর্জেন্টিনা যখন প্রথম বিশ্বকাপ জেতে, সে বছর দেশটির মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১৭৬ শতাংশ।
২০২২ বিশ্বকাপ জয় করে ৪২ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার পেয়েছিল আর্জেন্টিনা দল। তার ফলে দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতিতে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ সম্পদ যোগ হয়। সামগ্রিকভাবেও আর্জেন্টিনায় কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নতি চোখে পড়লেও এতে দীর্ঘমেয়াদি উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব তৈরি হয়নি।
মূল্যস্ফীতির হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গত ৭ মে ১০ হাজার পেসোর নোট ছাপানোর ঘোষণা দিয়েছে আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মার্চ মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ২৮৭ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
অর্থনৈতিক সংকট থেকে পরিত্রাণের জন্য আর্জেন্টিনা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শরণাপন্ন হয়েছে অনেকবার। ফলে এটি পরিণত হয়েছে আইএমএফ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া দেশে।
১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বিশ্বের বহু দেশের স্থিতিশীলতা, উৎপাদনশীলতা এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে আর্থিক সহায়তা ও নীতিগত নির্দেশনা দিয়ে আসছে।
আইএফএফের আর্থিক সাহায্য পেয়ে বহু দেশ অর্থনৈতিকভাবে সবল হয়েছে। একইসঙ্গে সংস্থাটি থেকে ঋণ নেওয়ার পরেও ঘুরে না দাঁড়াতে পারার বহু নজির রয়েছে।
অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলোর আইএমএফের ঋণের পরিমাণ কত, সেটি নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয়ে থাকে। পাশাপাশি কোনো দেশের জিডিপির অনুপাতে ঋণের পরিমাণও ঐ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
এ বছরের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী আইএমএফ থেকে ঋণ গ্রহণের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় ৫টিই আফ্রিকা মহাদেশের। আর ৩টি লাতিন আমেরিকার।
১। আর্জেন্টিনা
আইএমএফ থেকে ঋণ গ্রহণের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। বর্তমানে সংস্থাটি থেকে দেশটির ঋণের পরিমাণ ৩২ বিলিয়ন ডলার। এদিকে দেশটির জিডিপির পরিমাণ ৬০৪.৩ বিলিয়ন ডলার। সেক্ষেত্রে আইএমএফ-এর কাছে আর্জেন্টিনার ঋণ দেশটির জিডিপির অনুপাতে ৫.৩ শতাংশ।
জি২০ সদস্যভুক্ত আর্জেন্টিনা বিশ্বের অন্যতম শস্য রপ্তানিকারক দেশ। দেশটির ঋণ সমস্যার ইতিহাস বেশ পুরোনো। ইতোমধ্যেই আইএমএফ গত ছয় দশকে আর্জেন্টিনাকে ২০ বার বেইল আউট করেছে।
২। মিশর
১১ বিলিয়ন ডলারের লোন নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিশর। দেশটির মোট জিডিপির পরিমাণ ৩৪৭.৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ-এর কাছে মিশরের ঋণ দেশটির জিডিপির অনুপাতে ৩.১ শতাংশ।
৩। ইউক্রেন
আইএমএফ থেকে শীর্ষ ১০ ঋণ গ্রহীতার তালিকায় একমাত্র ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেন। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশটির অর্থনীতির এক তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বর্তমানে আইএমএফ থেকে দেশটির ঋণের পরিমাণ নয় বিলিয়ন ডলার। আর দেশটির জিডিপির পরিমাণ ১৮৮.৯ বিলিয়ন ডলার। সেক্ষেত্রে আইএমএফ-এর কাছে ইউক্রেনের ঋণ দেশটির জিডিপির অনুপাতে ৪.৭ শতাংশ।
৪। পাকিস্তান
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তান আইএমএফের ঋণের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। সংস্থাটির কাছে দেশটির ঋণের পরিমাণ সাত বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে দেশটির জিডিপির পরিমাণ ৩৭৪.৭ বিলিয়ন ডলার। সেক্ষেত্রে আইএমএফ-এর কাছে পাকিস্তানের ঋণ দেশটির জিডিপির অনুপাতে ১.৮ শতাংশ।
৫। ইকুয়েডর
তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে থাকা ইকুয়েডরের মোট আইএমএফ ঋণের পরিমাণ ছয় বিলিয়ন ডলার। দেশটির জিডিপির পরিমাণ বেশি নয়; ১২১.৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ-এর কাছে ইকুয়েডরের ঋণ দেশটির জিডিপির অনুপাতে ৪.৯ শতাংশ, শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
৬। কলম্বিয়া
তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা কলম্বিয়ার আইএমএফ ঋণের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলার। আর দেশটির মোট জিডিপির পরিমাণ ৩৮৬.১ বিলিয়ন। এ জিডিপি তালিকার শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আইএমএফ-এর কাছে কলম্বিয়ার ঋণ দেশটির জিডিপির অনুপাতে ০.৮ শতাংশ। শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে যা সর্বনিম্ন।
৭। অ্যাঙ্গোলা
তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলা। আইএমএফের কাছে দেশটির ঋণের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলার। দেশটির জিডিপির পরিমাণও বেশ কম; ৯২.১ বিলিয়ন ডলার। সেক্ষেত্রে আইএমএফ-এর কাছে অ্যাঙ্গোলার ঋণ দেশটির জিডিপির অনুপাতে ৩.২ শতাংশ।
৮। কেনিয়া
আইএমফের কাছে কেনিয়ার ঋণের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলার। আর পূর্ব আফ্রিকার দেশটির জিডিপির পরিমাণ ১০৪ বিলিয়ন ডলার। কেনিয়ার ঋণ দেশটির জিডিপির অনুপাতে ৩.২ শতাংশ।
৯। ঘানা
তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে ঘানা। আইএমফের কাছে দেশটির ঋণের পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলার। আর পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির জিডিপির পরিমাণ ১০৪ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে আইএমএফ-এর কাছে ঘানার ঋণ দেশটির জিডিপির অনুপাতে ২.৬ শতাংশ।
১০। আইভেরি কোস্ট
আইএমএফ থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়ে তালিকায় দশম অবস্থানে রয়েছে আইভেরি কোস্ট। সংস্থাটি থেকে দেশটি নিয়েছে দুই বিলিয়ন ডলার। আর দেশটির মোট জিডিপির পরিমাণ ৮৬.৯ বিলিয়ন। সেক্ষেত্রে আইএমএফ-এর কাছ থেকে আইভেরি কোস্টের ঋণ দেশটির জিডিপির অনুপাতে ২.৩ শতাংশ।
আইএমএফের কাছ থেকে মোট ১০০টি দেশ ঋণ নিয়েছে। এ ঋণের মোট পরিমাণ প্রায় ১১১ বিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষ ১০ দেশ নিয়েছে মোট ঋণের ৬৯ শতাংশ।
সহায়ক তথ্যসূত্র: এপি, ব্লুমবার্গ
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান