ফ্রান্সের আসন্ন নির্বাচনে মাখোঁর শক্ত প্রতিপক্ষ কে এই মারিন ল্য পেন?
ফ্রান্সে সংসদ ভেঙে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এক্ষেত্রে গতকাল (সোমবার) প্রথম দফার অপিনিয়ন পোলে দেখা যায়, মারিন ল্য পেনের নেতৃত্বে কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালি নির্বাচনটি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও জয়ী হবে।
এক্ষেত্রে ন্যাশনাল র্যালি নির্বাচনে ২৩৫ থেকে ২৬৫টি আসন পেতে পারে। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে দলটির প্রয়োজন ২৮৯টি আসন। আর বর্তমানে তাদের আসন সংখ্যা মাত্র ৮৮টি।
অন্যদিকে মাখোঁর সেন্ট্রিস্ট অ্যালায়েন্স আসন সংখ্যা ২৫০ থেকে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। তারা মোট ১২৫ থেকে ১৫৫টি আসন পেতে পারে বলে পোলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে ন্যাশনাল র্যালি ক্ষমতায় আসতে আসবে কি-না সেটি অবশ্য নিশ্চিত নয়। তবে এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছে দলটির নেতৃত্বে থাকা পেন।
১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করা পেন ২০১১ সালে বাবা জিন ম্যারির উত্তরাধিকারী হিসেবে ন্যাশনাল র্যালির নেতৃত্বে আসেন। ২০১৭ ও ২০২২ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন।
পেন ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস থেকে আইনে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি প্যারিসে অ্যাটর্নি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পেন পার্টির বেশকিছু বিতর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরেছিলেন। যার মধ্যে ইহুদি বিদ্বেষের সোচ্চার সমালোচনা ও ইউরোপকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে সরে এসে ফরাসি জাতীয়তাবাদের প্রচার করেন। কেননা এগুলো তার দলকে অতীতে অজনপ্রিয় করেছে বলে তিনি মনে করেন।
২০১২ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেন ন্যাশনাল র্যালির (তৎকালীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। যেখানে তিনি ১৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। যা দলটির প্রার্থী হিসেবে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছিল।
পেন অবশ্য দলের অভিবাসন বিরোধী অবস্থানের সাথে একমত হয়েছেন। একইসাথে তিনি ব্রেক্সিট ইস্যু ও ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জাতীয়তাবাদী নির্বাচনী ক্যাম্পেইনকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেন।
এমতাবস্থায় জাতীয়তাবাদী প্রচারণা থেকেই ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেন ম্যাক্রনের বিরুদ্ধে লড়াই করে দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করেন। তখন থেকেই দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে তিনি বেশ আলোচনায় আসেন।
২০১৯ সালে পেনের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে ফ্রান্স থেকে ন্যাশনাল র্যালি জয়লাভ করে। তখন ভাবা হচ্ছিল যে, ২০২১ সালে দেশটির রিজিওনাল নির্বাচনে দলটি ভালো ফলাফল করবে। কিন্তু শেষমেশ দেখা যায়, নিম্ন ভোটের হারের এই নির্বাচনে দলটি আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি।
২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাখোঁর বিরুদ্ধে বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ ছিলেন পেন। নির্বাচনটিতে প্রথম দফায় দ্বিতীয় হয়ে রানঅফে শতাংশেরও বেশি ভোট পান তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ৭২০ আসনের নির্বাচনে মধ্যপন্থি, উদার ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলো মিলে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখলেও বড় উত্থান হয়েছে ডানপন্থীদের। বিশেষ করে ফ্রান্স ও জার্মানিতে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করতে যাচ্ছে কট্টর ডানপন্থি দলগুলো।
২৭টি দেশের বুথফেরত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপীয় কমিশনের বর্তমান প্রধান উরসুলা ভন ডার লেনের মধ্য-ডানপন্থি দল ইউরোপীয়ান পিপলস পার্টি (ইপিপি) ইইউ পার্লামেন্টের ৭২০টি আসনের মধ্যে ১৯১টি আসনে জিতেছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মধ্য-বামপন্থি সোস্যালিস্টস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটরা (এস অ্যান্ড ডি) ১৩৫টি আসন পেয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা উদারপন্থি রিনিউ গ্রপ ৮৩টি আসন পেয়েছে।
নির্বাচনে ইউরোপীয়দের ভোট আগামী পাঁচ বছরের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেবে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, জাতীয়তাবাদের মতো বিষয়গুলো নির্বাচনের ফলাফলের ওপর অনেকটা প্রভাব বিস্তার করবে।
ডানপন্থি এবং কট্টর ডানপন্থি দলগুলো ইউরোপে জনপ্রিয়তা পাওয়ায় নির্বাচনের ফলাফলে ইতোমধ্যেই এর প্রভাব দেখতে পাওয়া গেছে। বুথফেরত জরিপ অনুযায়ী, মধ্য-ডানপন্থি ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আরও নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে। ফ্রান্স ও জার্মানিতে কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো বুথফেরত জরিপে এগিয়ে থাকলেও আশানুরূপ ফলাফল পায়নি মধ্যপন্থি, উদারপন্থি, গ্রিন পার্টি কিংবা বাম দলগুলো।
ব্রাসেলস ও স্ত্রাসবুর্গে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদ ইউরোপের নাগরিকদের জন্য আইন তৈরি করে এবং বার্ষিক বাজেট অনুমোদন করে, যা এই বছরে মোট ১৮৯ বিলিয়ন ইউরো নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি ইইউ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর সরকারের সাথে সমন্বয় করে গঠিত কাউন্সিলের মাধ্যমে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেয়। ইইউ নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই ইউরোপীয় কমিশনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নির্ধারণ করা হয়।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান