এইচএসসিতে পদার্থবিজ্ঞান প্রশ্নপত্র বিভ্রাট: কেন্দ্র সচিবসহ ৬ জনের গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে
চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন এক পরীক্ষার কেন্দ্রে পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্রের পরিবর্তে ২য় পত্রের প্রশ্নপত্র দেওয়ার ঘটনায় কেন্দ্র সচিব ও কলেজটির অধ্যক্ষ শিব সঙ্কর শীলের গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
এছাড়াও পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কসহ তিন সদস্য ও জেলা প্রশাসনের একজন ট্যাগ অফিসারের অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিজয় স্মরণী কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কেএম রফিকুল ইসলাম।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গতকালই তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে কমিটি। রিপোর্টে তিন স্তরে পাঁচ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গাফিলতির চিত্র উঠে এলেও এর দায় বর্তায় কেন্দ্র সচিবের ওপর। কারণ প্রতিটি ধাপেই কেন্দ্র সচিব জড়িত।'
গত বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে বিজয় স্মরণী কলেজ কেন্দ্রে পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্রের পরীক্ষায় নৈর্ব্যক্তিক অংশে সঠিক প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হলেও রচনামূলক প্রশ্নপত্রের ক্ষেত্রে ঘটে বিপত্তি। পর্যবেক্ষকরা বুঝতে পারেন তারা যে প্রশ্নপত্র দিয়েছেন সেটি মূলত পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্রের। পরে বোর্ডের সাথে কথা বলে জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে ১ম পত্রের প্রশ্নপত্র আনার পর দুপুর ১২টা থেকে পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়, যা শেষ হয় দুপুর আড়াইটায়।
এ ঘটনায় ওইদিনই কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ শিব সঙ্কর শীল ও পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ নোমানকে পরবর্তী পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ঘটনাটি তদন্তের জন্য সীতাকুণ্ড উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলিম বলেন, 'বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র জেলা প্রশাসনের ট্রেজারি শাখায় আসার পর কেন্দ্র সচিব ও পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা প্রথমে প্রশ্নপত্র বাছাই করে পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী আলাদা আলাদা ফয়েল পেপারের প্যাকেটে রাখেন। প্যাকেটের ওপর বিষয়ের নাম ও কোড লেখা হয়। এরপর ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে সেগুলো সিলগালা করে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ করা ট্রাঙ্কে রেখে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, 'রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে কেন্দ্র সচিব বা তার প্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত টিম গিয়ে তারিখ ও বিষয় কোড মিলিয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ট্রেজারি শাখা থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা শুরুর অন্তত এক ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর কেন্দ্র সচিব ও পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা প্রশ্ন ঠিক আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে স্বাক্ষর করেন। তারপর প্রশ্ন যায় পরীক্ষার কক্ষে।'
এর কোনো ধাপেই ভুল প্রশ্নপত্রের বিষয়টি নজরে না আসাকে বিস্ময়কর বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আব্দুল আলিম। তিনি এ প্রক্রিয়ায় জড়িত সবার যথাযথ শাস্তির দাবি করেন।
ইউএনও কেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, 'তিন স্তরেই গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রথমে প্রশ্ন সর্টিংয়ে ভুল করার ফলে ফয়েল পেপারের প্যাকেটে ভুল প্রশ্ন ঢুকে যায়। পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্ন সংগ্রহ করার সময়ও কর্মকর্তারা বিষয়ের নাম ও প্রশ্ন কোড যাচাই-বাছাই না করে প্রশ্ন নিয়ে আসেন। সবশেষে প্রশ্ন কেন্দ্রে আসার পর বিষয় কোড না দেখেই সরবরাহ করেন সচিব ও পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক।'
এর দায় কেন্দ্র সচিবের ওপরই বর্তায় বলে জানান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'প্রশ্ন বিভ্রাটের বিষয়টি জানার পর কেন্দ্র সচিব আমাকে জানাননি। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে অন্য একটি সূত্র থেকে খবর পাওয়ার পর আমি ফোন করলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন।'
তিনি আরো বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে। তারা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।'
চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম টিবিএসকে বলেন, পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্রের যে প্রশ্ন ভুলে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে, সেই প্রশ্ন দিয়ে আর পরীক্ষা হবে না। বিকল্প প্রশ্নে রুটিন অনুযায়ী পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে পর্যালোচনা করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্র সচিব ও বিজয় স্মরণী কলেজের অধ্যক্ষ শিব সঙ্কর শীলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।