‘আমার ভাইয়ারে ফিরায়ে দাও’: এখনো ভাইয়ের শোকে মূর্ছা যাচ্ছে বৃষ্টি
বৃষ্টি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ফয়সাল পড়তেন সম্মান প্রথম বর্ষে। তারা দুজন ভাই-বোন। দুজনে সারাদিন বাসা মাতিয়ে রাখতেন। কিন্তু এখন সবকিছু নির্জীব।
পড়ার টেবিল, ব্যবহার্য দ্রব্য আর পোশাক থরে থরে সাজানো আছে আগের মতোই। শুধু ফয়সাল আহমেদ শান্ত আর নেই।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সংঘর্ষে ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর ২নং গেটের মাঝামাঝি জায়গায় গুলিবিদ্ধ হন শান্ত। পরে তার মৃত্যু হয়।
ভাইয়ের এমন অকালপ্রয়াণ এখনো মানতে পারছে না ছোটবোন বৃষ্টি। সারাক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। কেউ কথা বলতে এলেই অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
'আমার ভাইয়ারে ফিরায়ে দাও। আমার ভাইয়া কই — আমি ভাইয়ার কাছে যাব। আমার ভাইয়া আর আইবে না।'
কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছাও যাচ্ছে বৃষ্টি। শান্ত নিহত হওয়ার দশদিন পরও এমন অবস্থায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আছেন স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা।
স্বজন আলাউদ্দিন বলেন, বৃষ্টির মানসিক বিপর্যয় খুব বেশি। 'ও ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তার ভাই ফিরবে না, এটা মানতেই পারছে না।'
শান্তর পিতা জাকির হোসেন বলেন, 'ওতো কোনো মিছিলে যায়নি। ও রওয়ানা করেছিল টুইশন পড়ানোর বাসায়। পথে গুলিতে মারা গেল আমার বাজান।'
তবে শান্তকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা মিসকাত গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গেই আন্দোলনে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন শান্ত।
কান্নায় ভেঙে পড়া জাকির বলেন, 'বিচার কার কাছে চাইব? বিচার করার মানুষ নাই। আল্লাহর কাছে বলি, বিনাদোষে আমার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার যেন আমি জীবদ্দশায় দেখে মরতে পারি।'
শান্তর মা স্কুলশিক্ষিকা রেশমা আক্তার বলেন, 'যেদিন লাশ নিয়ে এসেছি, তার সামনে-পেছনে পুলিশের গাড়ি। জীবিত অবস্থায় আমার ছেলেকে কেউ নিরাপত্তা দেয়নি।'
শান্ত চট্টগ্রামের ওমরগনি এমইসি কলেজের হিসাববিজ্ঞান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মূল বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের মহিষাদী গ্রামে।