হামাস নেতা হানিয়াকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
বুধবার (৩১ জুলাই) ইরানের রাজধানী তেহরানে হত্যা করা হয় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়াকে। তাকে হত্যার পর গাজা যুদ্ধ বিস্তৃত পরিসরে মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন হানিয়া।
হানিয়াকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায় দেওয়া হলেও দেশটি দায় শিকার করেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে হামাসের সিনিয়র নেতা খলিল আল-হায়া বলেছেন, একটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে অবস্থানকালে সরাসরি এক মিসাইলের আঘাতে মারা গেছেন হানিয়া।
হানিয়া মূলত কাতারেই থাকতেন অধিকাংশ সময়। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর তিনিই হয়ে উঠেছিলেন হামাসের আন্তর্জাতিক কূটনীতির চেহারা। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির জন্য পরোক্ষ আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
নেতানিয়াহু হানিয়ার হত্যার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে এক বিবৃতিতে বুধবার তিনি বলেছেন, সম্প্রতি হামাস ও হিজবুল্লাহসহ ইরানের প্রক্সিদের ওপর বড় আঘাত হেনেছে ইসরায়েল—এবং যেকোনো আক্রমণের জবাব দেবে তারা।
হানিয়াকে হত্যার এ ঘটনা গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বড় ধাক্কা হয়েই এসেছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা এক বিবৃতিতে বলেছে, হানিয়ার হত্যাকাণ্ড 'লড়াইকে নতুন মাত্রা দেবে এবং বড় অভিঘাত তৈরি করবে'। এ হত্যাকাণ্ডের বদলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরানও।
হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে তুরস্কে হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী সড়কে নেমে এসেছেন। হানিয়ার ছবিসংবলিত পোস্টার নিয়ে তুরস্ক ও ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে তারা স্লোগান দিয়েছেন: 'খুনি ইসরায়েল, ফিলিস্তিন থেকে বেরিয়ে যাও!'
উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, ঝুঁকি 'এখন নিশ্চিতভাবেই বেশি'।
মার্কিন নাগরিকদের লেবানন ভ্রমণে না যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েল হিজবুল্লার শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শাকরকে হত্যার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে খুন হলেন হামাস নেতা হানিয়া।
লেবাননের বৈরুতে হামলায় সাতজন নিহত ও ৭৮ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ইরানের একজন সামরিক উপদেষ্টাও রয়েছেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া তেহরানের কর্তব্য। ইরানের বাহিনি ইতিমধ্যে একবার ইরানে সরাসরি আক্রমণ চালিয়েছে।
এদিকে বিশ্লেষক ও হামাস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হানিয়ার উত্তরসূরি হবেন খুব সম্ভব কাতারে বসবাসরত খালেদ মেশাল।
ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেন্সার অবশ্য বলেছেন, ইসরায়েল গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গাজায় যুদ্ধ থামানোর জন্য বিভিন্ন আলোচনার মধ্যস্থতা করা কাতার হানিয়েকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছে।
২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে হিজবুল্লাহ ও হামাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুজন নেতাকে হত্যা করার ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।