আটকদের মুক্তি না দিলে পরীক্ষায় না বসার সিদ্ধান্ত বিভিন্ন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের
রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থী জাকি তাহসিন গত ২৯ জুলাই উত্তরায় গ্রেপ্তার হন। তার মা জানান, বন্ধুদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাজে উত্তরায় যাওয়ার পথে তাহসিনসহ তার আরও ছয়জন পরীক্ষার্থী বন্ধুকে আটক করে পুলিশ।
এরমধ্যে চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তাহসিন এবং তার দুই বন্ধু রাহাত ওবায়দুল্লাহ ও জাবের হোসেনকে পুলিশের ওপর আক্রমণ, ভাঙচুর ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাহসিনের মতো এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও রয়েছেন। গত ৩০ জুন এইচএসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল।
কিন্তু পরীক্ষার্থীদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত বাকি পরীক্ষাগুলোতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি কলেজগুলোর ২০২৪ ব্যাচ-এর 'শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পাঠানো' বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এসব কলেজের মধ্যে রয়েছে নটর ডেম কলেজ, ঢাকা কলেজ, ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজসহ আরও বেশ কয়েকটি।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, যতদিন পর্যন্ত না সকল অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারকৃত এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অন্যান্যদের মুক্তি দেওয়া হয়, তারা এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নটরডেম কলেজের একজন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অনেক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। আমরা সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের মুক্তি না দেওয়া হলে আমরা পরীক্ষায় বসব না।'
আইনজীবী নিয়োগ মন্ত্রণালয়ের
কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটককৃত এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মুক্ত করতে এরই মধ্যে আইনজীবী নিয়োগ করার কথা জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (১ আগষ্ট) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আইনজীবী নিয়োগের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশের হেফাজতে থাকা তিনজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। তারা শীঘ্রই তাদের পরিবারের কাছে ফেরত যাবেন।
এর বাইরে পরীক্ষার্থী কেউ আটক থাকলে জানানোর অনুরোধ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
ক্যারিয়ারে প্রভাবের আশঙ্কা
গ্রেপ্তার হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাহসিনের বাবা মোজাম্মেল হক একটি সরকারি কলেজের শিক্ষক। ৩০ জুলাই ছেলের মুক্তির জন্য তিনি চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সিএমএম) আসেন।
শিক্ষার্থীদের ধরপাকড় সম্পর্কে টিবিএসকে তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের এমন নির্বিচারে ধরপাকড় তাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি। বিনা অপরাধে তাদের আটকের কারণে তাদের ক্যারিয়ার নষ্টের পাশাপাশি মানসিকভাবেও শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।'
তাহসিনের আইনজীবী এ আল মামুন রাসেল টিবিএসকে বলেন, 'এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাতো এখন তাদের নিজেদের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। তারাতো কোনো আন্দোলনে নেই।'
'গ্রেপ্তার করে এসব মেধাবী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ হুমকিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে,' বলেন এ আইনজীবী।
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বয়কটের বিষয়ে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ইব্রাহীম খলিল বলেন, 'যেকোনো পরিস্থিতিই আসুক, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বয়কটের দিকে যাওয়া উচিত হবে না।'
এতে তাদের জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে তিনি বলেন, 'একজন বাবার অবস্থান থেকেও আমি কখনোই চাইব না আমার সন্তানের ক্যারিয়ারের একটি বছর নষ্ট হোক বা কোনো কারণে হুমকিতে পড়ুক।'
তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এখন যেহেতু সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে, সুতরাং তাদের উচিত হবে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া।'
১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে এইচএসসি
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তার আগ পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে মাউশি। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সূত্রে জানা গেছে, বিস্তারিত সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরবর্তীসময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে কয়েক দফায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।
প্রথমে গত ১৮ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তারপর একসঙ্গে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এরপর আরেক দফায় ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরবর্তী পরীক্ষা ছিল ৪ আগস্ট থেকে। এখন ১১ আগস্ট থেকে পরীক্ষা নেওয়ার নতুন সিদ্ধান্ত হলো।