কারফিউ শিথিলেও বাজারে ক্রেতা নেই, ব্যবসায় অনিশ্চয়তা
কারফিউ শিথিল হলেও রাজধানীর শপিং মলগুলোতে ক্রেতা নেই। ক্রেতার অপেক্ষায় অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা।
একই অবস্থা হোটেল-রেস্তোঁরা, বিনোদন কেন্দ্র ও খাদ্যপণ্যের বাজারেও। এসব জায়গাতেও মানুষ কম যাচ্ছেন। এতে সার্বিকভাবে বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
শুক্রবার (২ আগস্ট) রাজধানীর বেশ কয়েকটি শপিং মল, খাদ্যপণ্যের বাজার ও হোটেল-রেস্তোঁরায় ঘুরে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অস্থিরতার আতঙ্কে বাজারে আসছেন না মানুষ।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা নিউ মার্কেট। এ এলাকায় অনেকগুলো মার্কেট থাকায় মানুষের সমাগমও থাকে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবারে ক্রেতা সমাগম অনেক বেড়ে যায়। তবে গতকাল এ এলাকায়ও মানুষের আনাগোনা ছিল কম।
নিউ মার্কেট এলাকার নূরজাহান শপিং কমপ্লেক্স-এর বিক্রেতা পারভেজ হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'বেচাকেনা নাই। ২০ শতাংশ বিক্রিও এখন হয় না। মানুষ গ্যাঞ্জামের কথা শুনে বের হচ্ছে না। শুক্রবার হিসেবে কোনো বেচাকেনাই নাই। গত কয়েকদিন ধরেই এ অবস্থা।'
দেশের সবচেয়ে বড় জুতা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাটার বসুন্ধরা শপিংমল আউটলেটের ম্যানেজার আদিলুর রহমান বলেন, 'বাৎসরিক স্টক ক্লিয়ারেন্স অফার চলছে। পণ্যভেদে ২০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় রয়েছে। তবুও ক্রেতা নেই। সাধারণ সময়ের শুক্রবার তুলনায় অন্তত ৭০ শতাংশ কম বিক্রি হচ্ছে।'
বাটার মতোই প্রায় ক্রেতাশূন্য অধিকাংশ দোকানে। জুয়েলারি, কসমেটিকস, পোশাকের দোকানগুলোতেও ক্রেতা একেবারেই কম। সাধারণ সময়ে মানুষের ভিড় লেগে থাকলেও শুক্রবার ফাঁকা দেখা গেছে শপিং মলটির ফুডকোর্টও।
রাজধানীর রাপা প্লাজার ছোঁয়া বুটিকসের স্বত্বাধিকারী মো. শরীফুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'ব্যবসার খুবই খারাপ অবস্থা। মার্কেটে দোকানদার ছাড়া কোনো লোক নাই। গত তিন দিন এক টাকাও বিক্রি হয়নি। মাস শেষ হলেই কর্মচারীদের বেতন, দোকান ভাড়া দিতে হয়। ব্যবসা না হলে এসব কোথা থেকে দেব? ভয়াবহ অবস্থার দিকে আমরা যাচ্ছি।'
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, 'ব্যবসার অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না।
'অনেক দোকান গত ৫-৭ দিন বিক্রি করতে পারছে না। এখন ব্যবসা না হলে, ক্রেতা না এলে দোকান ভাড়া দেবে কোথা থেকে? আর কর্মচারীর বেতন দেবে কোথা থেকে? জুলাইয়ের শুরু থেকেই ব্যবসা খারাপ। ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে একেবারেই খারাপ পরিস্থিতি।'
কারফিউ শিথিলেও খুব বেশি পরিস্থিতি বদলায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ এখন অনেক হিসাব-নিকাশ করে ঘর থেকে বের হচ্ছে। মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক-শঙ্কা কাজ করছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, দেশের সব দোকান একদিন বন্ধ থাকলে লোকসান হয় ২ হাজার কোটি টাকার।
এদিকে খাদ্যপেণ্যের বাজারেও ক্রেতা সমাগম কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি চালের আড়তের বিক্রেতা মো. শাওন শুক্রবার টিবিএসকে বলেন, 'চালের বাজারে ক্রেতা নেই। মানুষজন আসছেন না। গত কয়েকদিন ধরেই এ সমস্যা। বিক্রি একেবারেই হচ্ছে না।'
একই কথা জানান পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া। তিনি টিবিএসকে বলেন, পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। দামও আগের মতোই আছে। কিন্তু ক্রেতা কম।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান টিবিএসকে বলেন, ইন্টারনেট না থাকায় কিছুদিন অনলাইনে বিক্রি বন্ধ ছিল।
এর পাশাপাশি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ হোটেল-রেস্তোরাঁয় যাচ্ছে কম। কারফিউ শিথিলে রেস্তোঁরা খুললেও বিক্রি কমে গেছে বলে জানান তিনি।
স্বাভাবিক সময়ে রাজধানীর বিনোদন পার্ক বা স্থাপনাগুলোতে শুক্রবার উপচে পড়া ভিড় থাকলেও গতকাল মানুষ দেখা যায়নি।
কনকর্ড গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অভ অ্যামিউজমেন্ট পার্কস অ্যান্ড অ্যাট্রাকশনস-এর প্রধান সমন্বয়ক অনুপ কুমার সরকার বলেন, 'গত শুক্রবার কারফিউ শিথিল করার পর পার্কগুলো চালু করা হয়। তবে মানুষ আসছে না। আজও (শুক্রবার) মানুষ একেবারে নাই বললেই চলে। ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ।'
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে গত ২০ জুলাই সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করে সরকার। কারফিউ শিথিলের পর থেকে দোকানপাট খুলতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা, কিন্তু ক্রেতার অভাবে কঠিন সময় পার করছেন তারা।