বন্যায় খাগড়াছড়িতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার উত্তর গঞ্জপাড়ার বাসিন্দা থোঅংগ্য মারমা। গত দুই মাসে বন্যায় তার বাড়ি তিনবার তলিয়েছে। আগের দুই বারের বন্যার অভিজ্ঞতার জেরে এবার তিনি পরিবার নিয়ে আগেভাগেই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন। এর একদিন পর এসে দেখেন, তার বাড়ি সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ঘরের সবকিছু।
শুধু থোঅংগ্য মারমাই নন, তার মতো একই এলাকার নয়ন মিয়া, শান্তিনগর এলাকার সুমন চন্দ্র দে, মেহেদীবাগ এলাকার মো. দুলাল মাঝিসহ বহু পরিবার তাদের ঘর হারিয়েছেন। বর্তমানে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশির বাসাতেই থাকছেন তারা।
বন্যার পানি যতই কমছে, ততই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দৃশ্যমান হচ্ছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে বন্যা দুর্গতরা এখন দিশাহারা। এই মুহূর্তে কী করবেন, সেটা ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছেন না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় ৪০ হাজার পরিবার কমবেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের কাঁচা ও আধাপাকা ঘর পানিতে ভেসে গেছে। জেলার দীঘিনালার মেরুং, কবাখালি, মাটিরাঙ্গার তাইন্দংসহ আশপাশের এলাকা, জেলা সদরের কালাডেবা, গঞ্জপাড়াসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
জেলা উপজেলার আঞ্চলিক, গ্রামীণ সড়ক, বাঁধ, সেতু, কালভার্ট স্রোতে ভেসে গেছে কিংবা ভেঙে গেছে। পাহাড় ধসেও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। দীঘিনালায় বন্যার পানিতে ডুবে এক কিশোরীর মৃত্যুও হয়েছে।
বন্যায় কৃষি খাতে দুই হাজার ১২৪ হেক্টর ফসলি জমির আমন, আউশ ও শাক-সবজি নষ্ট হয়েছে। পুকুর ডুবে গেছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম রবিশস্য চাষে প্রনোদণা দেওয়া হবে।
বন্যার পর থেকে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পৌরসভা, রেড ক্রিসেন্ট, বিদ্যানন্দসহ দেশের বিভিন্ন সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ দিচ্ছেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সদস্য মো. মোবারক হোসেন বলেন, ৭দিন ধরে খাগাছড়ির বিভিন্ন এলাকায় আমরা ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত ৮শ পরিবারকে খাবার সামগ্রী দিয়েছি। যা এখনো অব্যাহত আছে। একই সাথে আমরা প্রথম পর্যায়ে ১০টি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ঘর নির্মানের জন্য প্রয়েজনীয় সহযোগীতা করছি।
স্বাস্থ্য বিভাগ দূর্গত এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করছেন ভয়াভয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জরুরি ওষুধ,পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করছেন।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের বলেন, বন্যার কারণে পানিবাহিতসহ বেশ কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য বন্যা দুর্গত এলাকায় আমরা মেডিকেল ক্যাম্প করছি।
খাগড়াছড়িতে বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত ৫০২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ও নগদ সাড়ে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, 'আমরা সবাইকে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দিচ্ছি। তাদের বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য ও টাকা প্রদান করা হচ্ছে।'