ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এখনও যানজট, নৌপথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ
ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে গত ২৪ আগস্ট রওনা দেন কাভার্ড ভ্যান চালক মোহাম্মদ সুজন। ২৬ আগস্ট দুপুর ১টা পর্ন্ত তিনি ফেনীর মহিপাল পর্যন্ত এসেছেন।
সীমাহীন যানজট পেরিয়ে কতদিনে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে পারবেন, তা নিয়ে আছেন দুশ্চিন্তায়।
শুধু ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী চালকরাই নন, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রাক চালকরাও তিন থেকে চার দিন ধরে আটকে আছেন ফেনীর ছাগলনাইয়া, মহিপাল ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায়।
সড়কে বন্যার পানি উঠে যাওয়া ও গ্যাস-চালিত গাড়ির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে গন্তব্যে যেতে পারছেন না চালকরা; ডিপোতে আসতে পারছে না রপ্তানি পণ্যবাহী গাড়ি।
ডিপো মালিকরা জানিয়েছেন, সড়কের বিভিন্ন এলাকায় চট্টগ্রামমুখী ট্রাকগুলো রপ্তানি পণ্য নিয়ে গাড়িগুলো আটকে আছে। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে বড় ধরনের চাপে পড়তে পারে ডিপোগুলোকে।
সোমবার চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে ফেনীর মহিপাল এলাকা পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকামুখী লেনে যানজট আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। রোববার মিরসরাই সদর থেকে ঢাকামুখী লেনে যানজট থাকলেও সোমবার সেটি কমে ফেনীর ছাগলনাইয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়েছে।
তবে অন্যান্য দিনগুলোতে চট্টগ্রামমুখী লেনে যান চলাচল করলেও সোমবার এই লেনে যানজট আরও তীব্র হয়।
গত কয়েকদিনে রপ্তানি পণ্য নিয়ে আসা গাড়ির সংখ্যা কমে যাওয়ায় এর আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় রপ্তানি পাণ্যবাহী কন্টেইনারের যে জট ছিল, সেটি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
২৬ আগস্ট সকাল ৮টা পর্ন্ত ১৯টি ডিপোতে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ছিল ৮,২৯০ টিইইউ।
স্বাভাবিক সময়ে ডিপোগুলোতে দৈনিক রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার থাকে ৭ থেকে ৮ হাজার টিইইউ। গত দুই সপ্তাহ আগে এই সংখ্যা ১৫ হাজার টিইইউ ছিল।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা)- এর সেক্রেটারি রুহুল আমিন শিকদার টিবিএসকে বলেন, "বন্যার কারনে গত ৫ দিন ধরে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ থাকায় ডিপোতে রপ্তানি পণ্য নিয়ে কাভার্ড ভ্যান আসার সংখ্যা এক চতুর্থাংশ কমে গেছে।"
"ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে ২৬ আগস্ট ১১২৪টি, ২৫ আগস্ট ৬৫৮টি, ২৪ আগস্ট ৯৮৫ ট্রাক ডিপোতে আসে। স্বাভাবিক সময়ে ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০টি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান আসে ডিপোতে," বলেন তিনি।
রুহুল আমিন শিকদার আরও জানান, "ডিপোতে আগে থেকেই রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের জট ছিল। এই কয়দিন ডিপোতে পণ্য কম আসায় এখন সেই জট আর নেই। তবে যানজট কমে গেলে একসাথে অনেক পণ্য আসবে। তখন আবারও জট পরিস্থিতি তৈরি হবে"
বিকডার তথ্য অনুযায়ী, ২৬ আগস্ট চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে ৮,২৯০ রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার; ৮,৬৪৫ আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার এবং ৪৯,৯২৪ টিইইউ খালি কন্টেইনার রয়েছে।
বিকডার তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে ডিপোতে ৮,০০০ রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার থাকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় এ সংখ্যা ১৫,০০০ ছাড়িয়ে যায়। ১৬ আগস্ট কন্টেইনারের সংখ্যা ১৫,০৭৫ টিইইউতে পৌঁছায়।
নৌপথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ
এদিকে, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারি কমে গেছে।
গত সপ্তাহে দৈনিক কন্টেইনার ডেলিভারি ৪,০০০ টিইইউর বেশি হলেও, ২৬ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেলিভারি হয়েছে ১,৭৫৩ টিইইউ। ২৫ আগস্ট ১,৬৪৭ টিইইউ এবং ২৪ আগস্ট ১,৯২৯ টিইইউ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়।
ফেনী, কুমিল্লায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে সড়ক ও রেলপথে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার পরিবহনে ধীরগতিতে নৌপথে কন্টেইনার পরিবহনের সুযোগ দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম থেকে পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার পর সড়ক বা রেলপথে ঢাকায় না নিয়ে আমদানিকারকরা এখন জাহাজ যোগে পাঁনগাও আইসিটি নিয়ে সেখান থেকে ডেলিভারি নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।
ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, "বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে আমদানি রপ্তানিকারকরা চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক বা রেলপথে পণ্যবাহী কন্টেইনার পরিবহন অনেকক্ষেত্রেই শ্লথ/বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্বিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।"
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জনিয়েছে, আমদানি-রপ্তানি পণ্যবোঝাই কন্টেইনার পরিবহনে পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানির পর্যাপ্ত ইনল্যান্ড জাহাজ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের লজিস্টিকস সুবিধাদি এ কার্যক্রমের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড ও জেটিতে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউস (২০ ফুট দীর্ঘ) ধারণক্ষমতার বিপরীতে কন্টেইনার ছিল ৩৯,২৪৭ টিইইউস।