অফিসের সময় শেষে বসের সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার অধিকার’ পাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার চাকরিজীবীরা
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় অফিসের সময় শেষে বসের সঙ্গে "যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার অধিকার" সংক্রান্ত একটি আইন চালু হয়েছে, যা দেশটির চাকরিজীবীদের জন্য এক ধরনের স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
এখন দেশটির চাকরিজীবীরা তাদের কাজের সময় শেষে বসের দেওয়া ফোন কল ধরা বা বার্তা পড়তে বাধ্য নয়, ইচ্ছা করলে সেগুলো এড়িয়ে যেতে পারবেন এবং এতে বসের কাছ থেকে কোনও শাস্তির পাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
গত বছর প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ানরা প্রতি বছর গড়ে ২৮১ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করেন এবং তারজন্য তারা কোনো বেতনও পান না।
২০টিরও বেশি দেশ, প্রধানত ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকায় এমন নিয়ম রয়েছে।
এই আইন বসদের সাথে চাকরিজীবীদের কাজের সময় শেষে যোগাযোগ নিষিদ্ধ করে না। বরং এটি চাকরিজীবীদের এমন একটি অধিকার দেয়, যেখানে তারা চাইলে উত্তর না দিয়েও থাকতে পারবেন— যতক্ষণ না তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা অযৌক্তিক হিসেবে বিবেচিত না হয়।
এ আইনের আওতায়, নিয়োগকর্তা এবং কর্মীর মধ্যে বিরোধ সমাধানের চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল না হয় তবে অস্ট্রেলিয়ার ফেয়ার ওয়ার্ক কমিশন (এফডাব্লিউসি) বিরোধ সমাধানের চেষ্টা করতে পারে।
এফডাব্লিউসি পরবর্তীতে নিয়োগকর্তাকে কর্মীর কাজের সময় শেষে যোগাযোগ বন্ধ করতে আদেশ দিতে পারে। আর যদি তারা মনে করে কর্মীর অস্বীকৃতি অযৌক্তিক, তবে তারা জবাবদিহিতা করার আদেশ দিতে পারে।
এফডাব্লিউসি'র আদেশ না মানলে, কর্মীদের সর্বোচ্চ ১৯ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার জন্য জরিমানা হতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ জরিমানার পরিমাণ ৯৪ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার
কর্মীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো এই নতুন নিয়মকে স্বাগত জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল অব ট্রেড ইউনিয়নস বলেছে, "এই আইন কর্মীদের অযৌক্তিক কাজের সময় পার হওয়ার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার অধিকার দেবে এবং তাদের ব্যক্তি জীবনের সাথে কর্ম জীবনের ভারসাম্য তৈরি করতে সাহায্য দেবে
একজন কর্মস্থল বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে জানিয়েছেন, নতুন নিয়ম নিয়োগকর্তাদের জন্যও সহায়ক হবে। সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির জন হপকিন্স বলেন, "যে কোনো সংস্থা, যেখানে কর্মীরা ভালো বিশ্রাম ও ব্যক্তি জীবনের সাথে কর্ম জীবনের ভারসাম্য তৈরি করার সুযোগ পায়, সেখানের কর্মীরা কম অসুস্থ হবে এবং সহজে চাকরী ছাড়বে না।"
তবে, নতুন আইনের নিয়ে চাকরিজীবীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিজ্ঞাপন শিল্পের কর্মী রাচেল আবদেলনোয়ার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, "আমার মনে হয়, এমন আইন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দিনভর ফোন এবং ইমেইলে যুক্ত থাকি।"
অন্যরা মনে করছেন, নতুন নিয়ম তাদের জন্য বড় পরিবর্তন আনবে না। আর্থিক শিল্পের কর্মী ডেভিড ব্রেনান রয়টার্সকে, "এটি একটি চমৎকার ধারণা। আশা করি এটি ছড়িয়ে পড়বে। তবে আমাদের শিল্পে এটি ছড়িয়ে পড়বে কিনা তা সন্দেহজনক। আমরা ভালো পারিশ্রমিক পাওয়ায়, আমরা প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করব বলেই প্রত্যাশা করা হয়।"