জেরিন বেঁচে আছেন: ‘কিডনির পাশে ২টি বুলেট লাগলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই বগুড়ার সাতমাথায় এক কলেজছাত্রী আহত হন। গত তিনদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাকে লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়। অনেকেই দাবি করেন, তিনি নিহত হয়েছেন।
তবে বাস্তবতা হলো, তিনি সুস্থ আছেন। সেদিন ওই শিক্ষার্থী টিয়ারগ্যাস ও একাধিক রাবার বুলেটে আহত হন। এরপর জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনাটি বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার এলাকার। লুটিয়ে পড়া ওই তরুণী ঢাকার শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান জেরিন।
বগুড়া শহরের ব্যবসায়ী মো. জুয়েল আলমের মেয়ে জেরিন। জুলাইয়ের মাঝামাঝি ঢাকা থেকে বগুড়ায় আসেন পারিবারিক কাজে। ইতোমধ্যে রংপুরের আবু সাঈদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আন্দোলনে নিহত হয়েছেন।
১৮ জুলাই বাবা-মার নিষেধ এড়িয়ে লুকিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে জেরিন চলে যান শহরের থানামোড় এলাকায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে। মিছিলটির গন্তব্য ছিল সাতমাথা এলাকা। সেখানে গিয়েই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন জেরিন।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সেদিনের ঘটনা নিয়ে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। জেরিন জানান ঘটনার বিস্তারিত।
'[মিছিল নিয়ে] সদর থানার সামনে আসার পর পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। এশিয়া হোটেল পার হওয়ার পরও আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখে পড়ি,' বলেন জেরিন।
বাধা পেরিয়ে জেরিনদের মিছিলটি সাতামাথায় প্রবেশ করে। এরপর সেখান থেকে বগুড়া জেলা স্কুলের দিকে এগোতে থাকে।
'ওদিকে এগোনোর পর আমাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। তখন আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি।'
একাধিক রাবার বুলেট লাগার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন উল্লেখ করে আন্দোলনের সম্মুখসারির এ শিক্ষার্থী জানান, '...টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু হলে আমি ফিরে আসার চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে আমার কিডনির পাশে দুটি [রাবার] বুলেট লাগে। ওই সময় টিয়ারশেল লেগে আমি সাতমাথায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।'
জেরিন জানান, এরপর আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, 'সেখানে আমার চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। তখন আমার অক্সিজেন পালস রেট কমে আসছিল। পরে অন্য একটি মেডিকেলে নেওয়া হয় আমাকে। জ্ঞান ফেরার পর আমি জানতে পারি, সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ। কী হয়েছে তখন পর্যন্ত আমি জানতাম না।
'ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, আমি মারা গেছি। অনেকেই এমনটা ভেবেছেন। তবে আমি সুস্থ হওয়ার পর এবং ইন্টারনেট চালু হলে আমি নিশ্চিত করেছিলাম গুজবে কান না দিতে।'
জেরিন এখন আর কোনো শারীরিক জটিলতা অনুভব করছেন না বলে জানান। 'এখন আমাদের বিজয় হয়েছে। এটি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিজয়। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।'
নতুন করে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জেরিন বলেন, 'নতুন বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে অনেক গণহত্যার ফুটেজ আমরা পাচ্ছি। এসব ফুটেজ শেয়ার করার ক্ষেত্রে সবাইকে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।'
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার দেশ পরিচালনা করছে।