রাশিয়ার ‘রেড লাইন’ নিয়ে মজা না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে সরবরাহের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার "রেড লাইন" নিয়ে মজা না করার সতর্কবার্তা দেন।
ল্যাভরভ বলেন, "কোল্ড ওয়ারের (স্নায়ুযুদ্ধ) পর থেকে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে নিরাপত্তার ভারসাম্য রক্ষার পারস্পরিক প্রতিরোধের নীতি যুক্তরাষ্ট্র ভুলে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।"
সম্প্রতি রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে দীর্ঘ পাল্লার জেএএসএসএম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশটির চুক্তি প্রায় হয়ে এসেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম। চুক্তির জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অনেকদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিবেদনটি সম্পর্কে নিজের মতামত জানাতে গিয়ে রাশিয়ার এক টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ বলেন, "কোনো কিছুতেই আমি আর অবাক হব না। আমেরিকানরা ইতোমধ্যেই তাদের নিজেদের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। তাদের উসকানি দেওয়া হচ্ছে। জেলেনস্কি অবশ্যই তা লক্ষ্য করেছেন এবং এর সুযোগ নিচ্ছেন।"
ল্যাভরভ সতর্ক করে বলেন, "কিন্তু তাদের বুঝতে হবে, তারা আমাদের 'রেড লাইন' নিয়ে মজা করছে। তাদের এভাবে মজা করা উচিত নয়।"
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে তার "বিশেষ সামরিক অভিযান" শুরু করার পর থেকে বারবার পশ্চিমাদের সতর্ক করেছেন যাতে তারা রাশিয়াকে বাধা না দেয়; কারণ রাশিয়ার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে। তবুও ওয়াশিংটন ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে, যার মধ্যে ট্যাংক, উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে।
কিছু পশ্চিমা রাজনীতিবিদ মনে করেন, পুতিন 'নিছক' পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ইউক্রেনকে পুরোপুরি সমর্থন করা উচিত যাতে তারা যুদ্ধে জয়ী হয়।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ৬ আগস্ট ইউক্রেনের রাশিয়ায় আক্রমণ প্রমাণ করে যে পুতিনের "রেড লাইন" আসলে গুরুত্বহীন।
ল্যাভরভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জানে রাশিয়ার সীমারেখা কোথায়। তবে তারা যদি মনে করে ইউক্রেনে যুদ্ধ বাড়লে কেবল ইউরোপ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবে সেটা ভুল।
তিনি আরও বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র ভাবে, কেউ তার ক্ষতি করবে না।"এটি সোভিয়েত আমল থেকে চলে আসা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত ভারসাম্যকে দুর্বল করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"এই পারস্পরিক প্রতিরোধের ধারণা ম্লান হয়ে যাচ্ছে এবং এটি বিপজ্জনক," ল্যাভরভ বলেন।
ল্যাভরভ হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবির মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করেন। কিরবি জুনে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন– যুক্তরাষ্ট্র "তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ" চায় না।
কিরবি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছিলেন, "ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তেজনা বাড়লে ইউরোপের জন্য ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে" এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও ভালো হবে না।
এক সপ্তাহের মধ্যেই দ্বিতীয়বার মতো ল্যাভরভ যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে ইঙ্গিত দিলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেবল ইউরোপেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।
বুধবার ক্রেমলিন ঘোষণা দেয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তেজনা বাড়িয়ে মস্কোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা তৈরি করায় রাশিয়া তার পারমাণবিক নীতি হালনাগাদ করছে।
তবে পারমাণবিক নীতিতে কী পরিবর্তন আনা হবে বা এই পরিবর্তনগুলো কবে কার্যকর হবে তা নিয়ে রাশিয়া এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।