ইতালির ভিসাসহ পাসপোর্ট ফেরতের দাবিতে ঢাকার শাহাবুদ্দিন পার্কে জড়ো হয়েছেন ৫ শতাধিক মানুষ
ইতালির ভিসাসহ পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার দাবিতে ইতালি দূতাবাসের কাছে ঢাকার বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ পার্কে জড়ো হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। এসময় বিভিন্ন ব্যানার-পোস্টার হাতে নিয়ে অবস্থান নিতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, কৃষি ভিসা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ৯০ দিনের সময় দিয়েছে দূতাবাস। কিন্তু দুই থেকে আড়াই বছর হয়ে গেছে এখনো অনেকের পাসপোর্ট ফেরত দেয়নি দূতাবাস।
অন্যদিকে পাসপোর্ট না থাকায় তারা অন্য দেশে যেতে পারছেন না।
আজ সোমবার সকাল ১০টায় ইতালির ভিসাসহ পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভকারীরা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু সকাল ১১টা দিকে এক পক্ষ ইতালির দূতাবাস ঘেরাও করার পদক্ষেপ নেয়। পরে তারা সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোহিদুল ইসলাম বলেন, সকাল ১০টায় বিক্ষোভ শুরু হয় এবং এখনো চলছে।
তিনি আরও বলেন, "সকাল থেকে পাঁচ শতাধিক মানুষ ইতালীয় দূতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে তাদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে জড়ো হয়েছে। এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।"
এ বিষয়ে দ্য বিজনেস স্টান্ডর্ডের পক্ষ থেকে ইতালি দূতাবাসের মন্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ইতালির দূতাবাস এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনকারীদের কয়েকজন প্রতিনিধি দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশনের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাঁরা কিছু অনুরোধ পেশ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, "সাক্ষাৎকালে দূতাবাস ইতালিতে কর্মসংস্থান ভিসা প্রক্রিয়াকরণে চলমান বিলম্বের আইনি, কারিগরি ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। আবেদনকারীদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে যে কোনো মধ্যস্থতাকারী বা দালালের কাছে অর্থ প্রদান বা তাদের উপর আস্থা না রাখতে, কারণ তারা মূলত এই বিলম্বের প্রধান কারণ।"
এছাড়াও, দূতাবাসের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে আবেদনকারীদের জাল বা মিথ্যা নথি জমা না দেওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। দূতাবাস বলেছে, দুর্নীতি এবং মিথ্যা বা জাল নথি বা বিবৃতি দাখিল করা বাংলাদেশ ও ইতালির আইনে গুরুতর অপরাধ, এবং ইতালির দূতাবাস এই ধরনের অপরাধ মোকাবেলায় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দূতাবাস আরও আশ্বস্ত করেছে যে, তাদের প্রক্রিয়াকৃত আবেদনগুলির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দূতাবাস আবেদনকারীদের আশ্বস্ত করেছে যে, যারা 'নুল্লা অস্টা'র জন্য আবেদন করেছেন তারা মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করবেন না। কারণ তাদের আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে এবং সাক্ষাতের জন্যও সময় নির্ধারণ করা আছে।
সাক্ষাৎকালে দূতাবাস ভিএফএস গ্লোবালের ভূমিকাও স্পষ্ট করেছে। তারা জানান, "ভিএফএস গ্লোবাল একমাত্র দূতাবাসের অনুমোদিত সংস্থা, যা শুধু ইতালির ভিসা ও বৈধকরণ আবেদন সংগ্রহ এবং সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীদের কাছে পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার কাজ করে। দূতাবাস প্রতি বছর কয়েক হাজার আবেদন গ্রহণ করে, এবং এই ধরনের একটি সংস্থার সাহায্য ছাড়া এটি পরিচালনা করা সম্ভব হতো না।"
ভিএফএস গ্লোবাল দূতাবাসের পক্ষে এবং তাদের কঠোর নির্দেশনায় কাজ করে। এ সংস্থা ভিসার অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান বা তার সময়কাল নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে না এবং আবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময়সূচি নির্ধারণেও এর কোনো ভূমিকা নেই।
সাক্ষাৎকালে দূতাবাস জানিয়েছে যে, ইতালির নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারীরা তাদের আবেদন প্রত্যাহার করলে যেকোনো মুহূর্তে তাদের পাসপোর্ট ফেরত নিতে পারবেন। মে ২০২৪ এর পরে জমা দেওয়া ভিসার আবেদনগুলির ক্ষেত্রে, প্রধান কার্যালয় থেকে দেওয়া একটি বিশেষ ছাড়ের ফলে আবেদনকারীদের আর তাদের আবেদন সহ পাসপোর্ট জমা দিতে হবে না। পাসপোর্ট প্রয়োজন হলে পরে জমা দেওয়া যাবে, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
দূতাবাস আরও বলেছে যে, ভিসা ইস্যু করা একান্তভাবে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের অধিকার। তাই বাংলাদেশি নাগরিকদের ইতালির কর্মসংস্থান ভিসা ইস্যু বা প্রত্যাখ্যান সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত, সময়সীমা, প্রক্রিয়া, নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মাবলি শুধু ইতালির আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৩ সালে তারা প্রায় ৪০,০০০ ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করেছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক। ২০২৪ সালেও একই ধরনের সংখ্যার আবেদন প্রক্রিয়াকরণের প্রত্যাশা রয়েছে। ইতালিতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের অনেক বৈধকরণ এবং কনস্যুলার সেবা প্রদান করছে দূতাবাস।