আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন ভারতীয় নাবিকরা, কলম্বাস নয়: দাবি ভারতীয় মন্ত্রীর
ইতালির নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের বহু শতাব্দী আগেই ভারতীয়রা আমেরিকা 'আবিষ্কার' করেছে বলে দাবি করেছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিং পরমার। তিনি বলেন, "ভারতীয়রা সেখানে গিয়ে সান দিয়াগোতে মন্দির নির্মাণ করে ছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের 'ভুল ইতিহাস' শেখাচ্ছে।"
গতকাল মঙ্গলবার ভোপালের বরকতুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পশ্চিমা শিক্ষার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
ইন্দর সিং পরমার কোনো নির্দিষ্ট গ্রন্থাগার বা জাদুঘরের নাম উল্লেখ না করে বলেন, "অষ্টম শতাব্দীতে, ভারতীয়রা ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোতে গিয়েছিল এবং সেখানে মন্দির নির্মাণ করেছিল। এর প্রমাণ একটি আমেরিকান জাদুঘর এবং গ্রন্থাগারে রয়েছে।"
ভারতীয়রা আমেরিকাকে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে পরিণত করেছে বলে তিনি আরও দাবি করেন,"আমেরিকার উন্নয়নে মায়া সভ্যতাকে ভারতীয়রা সাহায্য করেছে।" মায়া সভ্যতা প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রসারিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো শহরটি (যেখানে কিছু মন্দির রয়েছে, তবে সবই বিংশ বা একবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত) ১৮ শতকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর আগে মধ্য প্রদেশের বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব তার প্রথম ভাষণে দাবি করেছিলেন, একসময় ভারতের উজ্জয়নীকে সময়ের বৈশ্বিক মান হিসেবে ধরা হত। তার প্রশাসন গ্রিনউইচ মান মন্দির থেকে এ মর্যাদা ফিরিয়ে আনবে। তার এমন বক্তব্যের কয়েক মাস পরই এমন মন্তব্য করলেন পরমার।
উল্লেখ্য, কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন এমন কাহিনিটি মূলত কল্পিত।
কলম্বাস ১৫ শতকের শেষ এবং ১৬ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপ থেকে এশিয়ায় সমুদ্রপথ খুঁজে বের করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালান। এসময় তিনি স্পেন থেকে ক্যারিবিয়ানে একাধিকবার যাত্রা করেছিলেন। তবে, তার এই অভিযাত্রায় তিনি উত্তর আমেরিকায় পৌঁছাতে পারেননি।
তাছাড়া, তিনি যে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ভ্রমণ করেছিলেন, সেগুলোতে ইতোমধ্যেই আদিবাসী জনবসতি ছিল।
তবে, ভারতীয়রা অন্যান্য দেশ থেকে আগত অভিযাত্রী এবং উপনিবেশকারীদের আগে আমেরিকায় পৌঁছেছিল, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
কলম্বাস ১৫০৭ সালে মারা যান, তখনও তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি এশিয়া ভ্রমণ করেছেন। তবে আরেক ইতালীয় অভিযাত্রী আমেরিগো ভেসপুচি ১৫০১-১৫০২ সালে ব্রাজিলে ভ্রমণের পর জোর দিয়ে বলেন যে এটি এশিয়ার অংশ নয়। বরং এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন মহাদেশ, যা আগে ইউরোপীয়দের অজানা ছিল। তার এই তত্ত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর, ইউরোপীয় ঐতিহাসিকরা ভেসপুচির প্রথম নামটি ব্যবহার করে মহাদেশটির নামকরণ করেন 'আমেরিকা'।
ভারতে কলম্বাস শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন পরমার। তিনি বলেন, "শিক্ষায় শেখানো উচিত ছিল যে কলম্বাসের পর যারা আমেরিকায় গিয়েছিল তারা স্থানীয় আদিবাসীদেরহত্যা করেছিল এবং তাদের জমি দখল করেছিল। কিন্তু তা শেখানো হয়নি।"
পরমার মূলত 'পশ্চিমা শিক্ষাব্যবস্থার' বিপদ সম্পর্কে যুক্তি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, "কেন্দীয় সরকারের ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করছে।"
তিনি বলেন, "ভারতকে চিরস্থায়ীভাবে শাসন করার জন্য আক্রমণকারীরা দেশের শিক্ষার ওপর আঘাত হেনেছিল এবং এটিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আমরা সৌভাগ্যবান যে ২০২০ সালে শিক্ষাবিদরা জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে এসেছেন এবং একটি আধুনিক ও উন্নত ভারত গড়ার জন্য 'বিশ্বগুরু' হওয়ার সংকল্প করেছেন।"