সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস ৪ মার্কিন সিনেটরের
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং জবাবদিহিতার জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের চার সিনেট সদস্য। চিঠিতে বাংলাদেশের এই সংকটময় সময়ে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সফলভাবে উত্তরণ নিশ্চিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
গতকাল শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কমিটির ওয়েবসাইটে এ চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী আইনপ্রণেতারা হলেন- এই কমিটির প্রধান ও সিনেটর বেন কার্ডিন, সিনেটর ক্রিস মারফি, সিনেটর ক্রিস ভ্যান হলেন ও সিনেটর জেফ মার্কলে।
চিঠির শুরুতেই বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ায় এবং নেতৃত্ব দেওয়ায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান সিনেটররা। তারা বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনার জন্য গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
এতে সম্প্রতি হওয়া ব্যাপক বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেশে জরুরি ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সংস্কারকাজ চালানো ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং বাস্তবিক অর্থেই দেশে একটি রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আনার দাবি জানানো হয়।
তারা আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ, হিন্দু সম্প্রদায়, কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ ঝুঁকিপূর্ণ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত জবাবদিহি করার ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিনেটররা লিখেছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি পরিবর্তনের শক্তিশালী উদাহরণ স্থাপন করেছেন, তা শেখ হাসিনার সরকারসহ পুরো বিশ্ব দেখেছে। এই পরিবর্তন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, মানবাধিকার রক্ষা এবং শাসন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার এক ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি করেছে।
তারা আরও বলেন, এই পরিবর্তন বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা যেমন- মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং বৈচিত্র্যময় মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতি সমর্থন এবং জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনারে এক বড় সুযোগ এটি। বাংলাদেশের জনগণ এমন একটি সরকার পাওয়ার অধিকার রাখেন, যা তাদের মতামতকে সম্মান জানাবে, অধিকার সুরক্ষিত করবে ও মর্যাদা রক্ষা করবে।
সিনেটররা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে লিখেছেন, নাগরিকেরা যখন একত্র হন, তাদের কণ্ঠস্বর; এমনকি সবচেয়ে কঠোর ও কর্তৃত্ববাদী নেতাদেরও ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতে পারে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত এমনি আসেনি। র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়ে বরং নিষ্ঠুরভাবে শক্তি প্রয়োগ করেছে, যার ফলে শত শত বিক্ষোভকারী নিহত ও হাজার হাজার আহত হয়েছেন এবং অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তারা অধ্যাপক ইউনূসের মানবাধিকার ও বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আস্থার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন।