ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নতুন অধ্যায়: নিউইয়র্কে বাইডেন-ইউনূস বৈঠক ২৪ সেপ্টেম্বর
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের উদাহরণ এ বৈঠক।
নিউইয়র্কে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, শুধু দুইজনের মধ্যেই বৈঠকটি হতে যাচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ গত কয়েক দশকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেননি।
আগামী ২৩ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে বাইডেন নিউইয়র্ক সফর করবেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিউইয়র্ক সফর নিয়ে প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট বাইডেন আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি মোকাবিলা, বৈশ্বিক সমৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া এবং মানবাধিকার রক্ষায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার রাতে (স্থানীয় সময়) নিউ ইয়র্কে পোঁছাবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। এখানে সাইডলাইনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আবদুল মুহিত এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সিডিএ সালাহউদ্দিন মাহমুদ স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
সম্প্রতি ঢাকায় মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো বর্ণনা করেছেন ইউনূস। তিনি বলেন, তার প্রশাসন অর্থনৈতিক 'পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও পুনরায় চালু' করতে, আর্থিক খাত, বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান গঠন ও উন্নয়নে তাদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের রূপরেখা খুঁজছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করবেন ইউনূস।
তৌহিদ হোসেনের মতে, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএসএইড প্রশাসকসহ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সময়ে সভার অনেক সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে নেওয়া হয়। সেই বিবেচনায় নতুন সভা যুক্ত হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনো সভা বাদ পড়তে পারে।
ইতালির প্রেসিডেন্ট ও কুয়েতের যুবরাজের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন বলে জানান তিনি।
২৪ সেপ্টেম্বর ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
সেখানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ, পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন।
প্রধান উপদেষ্টা 'মিট দ্য ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ' নামে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টেও যোগ দেবেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুহাম্মদ ইউনূসের আয়োজনে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সফরে সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।