যে কারণে এক মাসে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর ৮০ শতাংশ বেড়েছে
এই এক মাসে দেশের প্রথম শরিয়াহভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মতো ৯ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
ইবিএল সিকিউরিটিজের দৈনিক বাজার পর্যালোচনা অনুসারে, সোমবার ইসলামী ব্যাংকের মোট বাজার মূলধন ৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ঢাকা শেয়ারবাজারে অষ্টম বৃহত্তম।
বর্তমানে ব্যাংকিং স্টকগুলোর মধ্যে বাজার মূলধনের শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, যার মূল্য ৯ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা।
মূলত তিনটি কারণে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর এত বেশি বেড়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকটি থেকে এস আলম গ্রুপকে সরিয়ে দেওয়া, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) বিনিয়োগ আলোচনা, এবং তাদের হোল্ডিং বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের প্রচেষ্টা এই দরবৃদ্ধির মূল কারণ।
একজন বাজার বিশ্লেষক বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর শেয়ারহোল্ডার ও ব্যাংকটির কর্মকর্তারা এস আলম গ্রুপকে ইসলামী ব্যাংক থেকে সরানোর দাবি জানান। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর গত ২৫ আগস্ট এস আলম গ্রুপের মনোনীত সদস্যদের বোর্ড থেকে অপসারণ করে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করেন।
ওই বিশ্লেষক বলেন, নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এদিকে বাজারে খবর আছে যে, বর্তমানে যারা ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ধারণ করছেন তারা তাদের শেয়ারহোল্ডিং বাড়ানোর জন্য শেয়ার কিনছেন—যাতে এস আলম গ্রুপের মতো অন্য কোনো গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে যোগ দিতে না পারে।
আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকে ১০-১৫ শতাংশ অংশীদারত্ব অর্জনের জন্য আইএফসির সঙ্গে আলোচনা চলছে, যা ব্যাংকটিতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে।
শান্ত সিকিউরিটিজ লিমিটেডের হেড অভ রিসার্চ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এস এম গালিবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গভর্নরের কথা যদি সত্য হয়, তাহলে এই পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকটির শেয়ারে বিনিয়োগে ঝুঁকি রয়েছে। কারণ, ব্যাংকটি থেকে নিয়ম লঙ্ঘন করে ব্যাপক ঋণ দেয়ার অভিযোগ আছে। এই ঋণ খেলাপি হলে ব্যাংকটির নন-পারফর্মিং লোনের অনুপাত বাড়তে পারে, যা উচ্চতর প্রভিশনিং ও মুনাফা হ্রাসের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
ইবিএল সিকিউরিটিজের হেড অভ রিসার্চ রেহান কবির বলেন, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি 'হাইপ' তৈরি করেছে। ফলে অনেক বিনিয়োগকারী এই শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগ করছেন। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এস আলম গ্রুপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ব্যাংকটির অবস্থার উন্নতি হবে।
তবে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে।
সূত্রমতে, গত ২৭ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদের প্রথম বৈঠকে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন সাড়ে সাত বছরে ব্যাংক থেকে নেওয়া সব ঋণ পুনঃনিরীক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ব্যাংকের এমন একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'এ সময়ের মধ্যে কারা, কোন প্রক্রিয়ায় ঋণ নিয়েছে এবং এসব ঋণের যথাযথ জামানত আছে কি না, তা বের করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
২০১৭ সালে এস আলম ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ব্যাংকটির পর্ষদ সদস্য ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তখন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর মালিকানায় থাকা বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বড় অংশ ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দেয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামে থাকা ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ফ্রিজ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), যাতে তারা এসব শেয়ার বিক্রি করতে না পারে।
ফ্রিজ আদেশে নাম থাকা পরিচালকদের কাছে সম্মিলিতভাবে ইসলামী ব্যাংকের ৩০ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে, যার মূল্য ছিল ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।