ইউনূসের সাথে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতি ‘পূর্ণ সমর্থন’ ব্যক্ত করলেন বাইডেন
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়েছে।
বৈঠকে অন্তর্বর্তী বাংলাদেশের সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন জো বাইডেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আগের সরকারের অত্যাচার ও দমনপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা কীভাবে রুখে দাঁড়িয়ে ও নিজেদের জীবন জীবন উৎসর্গ করে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি করেছে – বাইডেনকে তা বলেন ড. ইউনূস।
বাংলাদেশের পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে –একথার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রয়োজন। এসময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁকে তার প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ছাত্ররা যদি দেশের জন্য এত আত্মত্যাগ করতে পারে, তাহলে আমাদেরও অনেক কিছু করা উচিত।
বৈঠকে চলাকালে আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের বই "দ্য আর্ট অফ ট্রায়ামফ" এর একটি কপি বাইডেনের হাতে তুলে দেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, এই প্রথম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট।
আজ মঙ্গলবার রাতে (নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে) জাতিসংঘের সদর দপ্তরের নির্ধারিত সভাকক্ষে বৈঠকটি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, "আজকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে (এ ধরনের বৈঠক) খুবই বিরল। বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে আমরা আশা করছি।"
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের এবং এই বৈঠক তা নতুন মাত্রায় উন্নীত করবে।
শফিকুল আলম জানান, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, গণতান্ত্রিক রুপান্তর এবং বাংলাদেশের সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে বৈঠকে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হতে পারে। "রুপান্তরের এই সময় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াচ্ছে–এটা খুবই ভালো খবর।"
শ্রমখাতের সংস্কার ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নিবিড়ভাবে কাজ করছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকটি দুই দেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের প্রতিফলন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা ইউএনবিকে বলেছেন, এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ গত কয়েক দশকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেননি। এত কোনোকিছু নিয়ে গভীরভাবে আলোচনার সময় না পাওয়া গেলেও – এই বৈঠকের সাথে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী বার্তা ও প্রতীকী বিষয় জড়িত।
বৈঠকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র শুধু দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিভাবে নয়, বরং অস্থির এই সময়ে বাংলাদেশের পাশে অবস্থান নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়েও একটি অর্থপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়া স্বাভাবিক নয়, এবং ঢাকা আশা করছে এই বৈঠক থেকে একটি নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্ব বেরিয়ে আসবে, যা সব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে এসেছেন বাইডেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নিউইয়র্ক সফর নিয়ে তার প্রেস সচিব কারিন জিন-পিয়েরে বলেছেন, ২৪ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট বাইডেন আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি মোকাবিলা, বৈশ্বিক সমৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া এবং মানবাধিকার রক্ষায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে তাদের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ যেহেতু আরও ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের রূপরেখা খুঁজছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে এটি ড. ইউনূসের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর, এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রথম বিদেশ সফর।
।