খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও পৌর এলাকা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আসায় আজ বুধবার (২ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিকাল ৩টা থেকে আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বর্তমানে জনমনে আতঙ্ক থাকলেও পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির টহল চলছে। বাজারের দোকানপাট খোলা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাসগুলোও চলাচল শুরু করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষককে হত্যার জেরে পাহাড়ি বাঙালি সম্প্রদায়ের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এদিন বিকেল ৩টা থেকে সদর উপজেলা এবং পৌর এলাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে জেলা সদর ও পৌর এলাকায় জারি করা অনির্দিষ্টকালের ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল উভয়পক্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় জড়ায়। শহরের পানখাইয়াপাড়া সড়ক ও মহাজনপাড়ায় অন্তত ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। অনেক দোকানের মালামাল সড়কে এনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। সকাল থেকে সীমিতসংখ্যক দূরপাল্লার গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সড়কে কম যানবাহন চলাচল করছে।
এদিকে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার জেরে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রোজনিল শহীদ চৌধুরীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় এবং সরকারি কাজে বাঁধা দেয়া ও হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে শিক্ষক হত্যার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।
আজ (বুধবার) সকালে খাগড়াছড়ি বাজার ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, "আমরা জনগণকে অনুরোধ করবো যাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়।" নিহতের পরিবারের সদস্যরা আসলে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, "ইতিমধ্যে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত জারি করা ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।"
গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলায়।
মূলত ধর্ষণের অভিযোগ তুলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ভুক্তভোগী একই প্রতিষ্ঠানেরই সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পর তা পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতে রূপ নেয়।