কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে কয়েক হাজার ফাঁকা ভাউচার উদ্ধার
হিসাবরক্ষকের কক্ষের প্রত্যেকটি আলমারিতে কার্টনভর্তি খালি বিল-ভাউচার। কোনোটি কুমিল্লা শহরের নামিদামি রেস্টুরেন্টের, কোনোটি ডেকোরেটর দোকানের। কোনোটির দুটি পাতা ব্যবহৃত, কোনোটির একটি পাতাও ব্যবহার করা হয়নি। খালি এসব বিল-ভাউচার পাওয়া গেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলার হিসাবরক্ষকের কক্ষ থেকে।
রোববার (৬ অক্টোবর) এসব বিল ভাউচার উদ্ধার করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সমন্বয়করা।
ভিক্টোরিয়া কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কাছে অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী ও কলেজের বিভিন্ন সূত্রে অর্থ লোপাটের অভিযোগ ওঠে।
রোববার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা কলেজের হিসাব শাখায় গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চান। পরে কলেজের হিসাবরক্ষক মো. সাইফুদ্দিন সুমন বিচলিত হয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা তার কক্ষে থাকা খোলা আলমারিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খালি বিল-ভাউচার দেখেন। পরে তারা অন্য আলমারিগুলোতে খুঁজে কয়েক হাজার বিল-ভাউচার পান। এ সময় হিসাবরক্ষক সাইফুদ্দিন সুমনকে এসব বিল-ভাউচারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এ সময় দ্য কুমিল্লা ক্লাব, মদিনা স্যানেটারি, মোস্তফা ফার্নিচার হাউজ, কাক্কুর ক্যান্টিন, হোটেল ছন্দু ব্রিজ শাখা, হোটেল ছন্দু বিশ্বরোড শাখা, কিং ফিশার রেস্টুরেন্ট, নূর জাহান হোটেল, ঘরোয়া হোটেল, আদিবা কম্পিউটার, ডায়না হোটেল, রিয়াজ প্রিন্টার্স এন্ড অফসেট প্রেস, নিউ পুষ্পালয়, মুসলিম সুইটস, চান্দিনা পেপার হাউজসহ কয়েকশো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খালি বিল-ভাউচারের বই পাওয়া যায় হিসাবরক্ষকে কক্ষে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সমন্বয়ক তোফায়েল হোসেন, আনোয়ার হোসেন টুটুল, জাহিদুল ইসলাম ও মাকসুদা সুলতানা বলেন, 'আমরা হিসাব রক্ষক সাইফুদ্দিন সুমনকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ভোগান্তি ও অর্থ বেশি নেওয়ার অভিযোগটি সম্পর্কে জানতে চাই। এ সময় তাকে বিচলিত হতে দেখলে আমরা কলেজের খোলা আলমারিতে খালি বিল-ভাউচারের কয়েকটি বই দেখতে পাই। পরে আমরা বিভিন্ন আলমারি খুলে দেখতে পাই হাজার হাজার খালি বিল-ভাউচার।'
সমন্বয়করা জানান, অফিসকক্ষ থেকে এসব বিল-ভাউচার উদ্ধারের পর তারা বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে সেখানেও এরকম খালি বিল-ভাউচারের বই পান। পরে তারা সেগুলো অধ্যক্ষকে দিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে হিসাবরক্ষক সাইফুদ্দিন সুমন বলেন, 'এসব বিল-ভাউচার অধ্যক্ষ রতন কুমার সাহার সময় থেকে চলে আসছে। এগুলো খালি ছিল, আমরা স্পর্শ করিনি।'
অর্থ লেখা ও তারিখবিহীন লেখা বিল ভাউচার সম্পর্কে জানতে চাইলে সুমন বলেন, 'এসব বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।'
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঁঞা বলেন, 'ভিক্টোরিয়া কলেজের দুর্নীতি নিয়ে দুদক তদন্ত করছে। যদি কেউ অপরাধ করে থাকেন, দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) দেখবে। আমাদের উচিত দুদককে সহযোগিতা করা।'
কলেজ প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কলেজ প্রশাসন থেকে আমরা এই বিল-ভাউচারের বিষয়ে একটি কমিটি করব। কমিটির তদন্ত শেষে অনিয়মের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'