রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি: ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে তার সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও একজন সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ ওই দুজন হলেন ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪) ও শফিকুল ইসলাম (৪৫)। আর সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন আরিফ (২০)। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে একদল বিক্ষোভকারী বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পিজিআর সদস্যরা ব্যারিকেডের সামনে অবস্থান নেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'বঙ্গভবনের সামনে থেকে ছররা গুলিতে আহত হয়ে দুজন ও সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হয়ে একজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানিয়েছি।'
এদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আদিলুর রহমান শুভ্র। আগামীকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে তাদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
এর আগে আজ বিকেল ৪টা থেকে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে একাধিক সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে বাধা দেয় নিরাপত্তা বাহিনী।
রাত ৮টা ১৫ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নারী সদস্য মাইকে ঘোষণা দেন। এরপরে ৩০০-৪০০ জন বঙ্গভবনের সামনের ব্যারিকেড ধাক্কাধাক্কি করেন। ৮টা ২২ মিনিটের দিকে আন্দোলনকারীদের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে উত্তেজনা আরও বাড়ে। পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টাও করেন বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা।
তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের বঙ্গভবনের ভেতরে পাঠিয়ে দেন। পরে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান উপস্থিত সেনাসদস্যরা। তারা আন্দোলনকারীদের মাইকিং করে সরে যেতে বলেন। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন আন্দোলনকারীরা।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাইকিং করতে শুরু করেন। তারা আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বলেন। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।
তাদের কর্মসূচি থেকে বলা হয়, "বর্তমান রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দোসর। আমরা চাই না সে রাষ্ট্রপতি পদে থাকুক। তাই আমরা তাকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি তিনি যেন রাষ্ট্রপতির পথ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন তাহলে আমরা জানি তাকে কীভাবে পথ থেকে সরাতে হবে।"
বাহার উদ্দিন নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, "রাষ্ট্রপতি চুপ্পু যে পর্যন্ত তার পদ থেকে পদত্যাগ না করবেন সে পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না। চুপ্পু একজন মিথ্যাবাদী। সে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর। আমরা চাই না কোনো স্বৈরাচারের দোসর এই পদ থাকুক।"
আরেক আন্দোলনকারী মো.সোহাগ বলেন, "আমরা দেখতে চাই সাহাবুদ্দিন কতদিন বঙ্গভবনে থাকতে পারে। ছাত্র আন্দোলনের আহতরা পথে পথে আর দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারের দোসর রাষ্ট্রপতি কেন বঙ্গভবনে আরাম আয়েশ করবে। এই রাষ্ট্রপতি ভারতের দালাল এবং সে শেখ হাসিনার দোসর। তাকে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির পর থেকে পদত্যাগ করতে হবে।"
এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ(ডিএমপি)।
বঙ্গভবনের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ ও সেনা বাহিনীর এপিসি ও জলকামান।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গভবনের সামনে মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও বক্তব্য দিচ্ছেন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটির ব্যানারে আসা বিক্ষুব্ধ জনতা। পাশেই 'রক্তিম জুলাই-২০২৪' ব্যানারে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করতে যায় অর্ধশত জনতাকে।
বঙ্গভবন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ডিএমপি থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বঙ্গভবন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য। সে অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে সেজন্য স্থানীয় থানা পুলিশের পাশাপাশি সেখানে সহযোগিতায় রয়েছে সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্যরা।
সম্প্রতি গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, "(পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার) বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়ত সময় পাননি।"