শেষ পর্যন্ত কিডনি বিক্রি করতে হলো না; ঋণ পরিশোধের পর নতুন করে স্বপ্ন দেখছে মগবাজারের সেই দম্পতি
'বুকের ওপর থেকে বড় পাথর নেমে গেল। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দুটো ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারব। এখন থেকে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারব, যা বিগত দুই বছরে কল্পনাও করতে পারতাম না,' বলছিলেন মগবাজার এলাকার দর্জি জামশেদ রহমান। মাস খানেক আগেও আত্মহত্যার কথা ভাবছিলেন তিনি।
জামশেদের সংসারে স্ত্রী বিবি হালিমা এবং এক কন্যাসন্তান নাওয়ার। মহামারির সময় সংসার চালাতে গিয়ে এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন জামশেদ। দুই বছরের ব্যবধানে তার ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ লাখ টাকারও বেশি।
ঋণের কিস্তির টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন জামশেদ-হালিমা দম্পতি। এক পর্যায়ে কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন জামশেদ। এ উদ্দেশ্যে লিফলেট তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে দেন তিনি।
রাজধানীর ইস্কাটনে দেখা একটি লিফলেট থেকে প্রাপ্ত নম্বরে যোগাযোগ করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। পরে গত ১২ অক্টোবর 'আমি কিডনি বিক্রয় করতে চাই; মগবাজারের এ দম্পতির কিডনি বিক্রিই কেন শেষ উপায়?' শিরোনামে টিবিএস সংবাদ প্রকাশ করে।
এরপর একটি বেসরকারি টেলিভিশনেও সংবাদটি প্রচারিত হলে নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেন জামশেদ।
একজন বিত্তবান ব্যক্তি জামশেদ-হালিমা দম্পতির বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করে দেন। এছাড়া, স্থানীয় মহাজনের ঋণ পরিশোধের জন্য মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ইকরা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
এর মধ্যে চার লাখ টাকা এককালীন সহযোগিতা হিসেবে এবং এক লাখ টাকা বিনা সুদে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়।
ইকরা ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইদ ইমরান বলেন, 'খবরটি দেখার পর আমরা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জামশেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, এনজিও ঋণ একজন শোধ করে দিয়েছেন। তবে স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া সাড়ে চার লাখ টাকার মতো ঋণ আছে, যার জন্য প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়।
'আমরা তাকে চার লাখ টাকা এককালীন সহযোগিতা করেছি। এছাড়া বিনা সুদে এক লাখ টাকা ধার দিয়েছি,' বলেন সাইদ ইমরান।
মঙ্গলবার বিকেলে জামশেদ-হালিমা দম্পতির সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। চোখের পানি মুছতে মুছতে জামশেদ বলেন, 'মাস খানেক আগেও স্ত্রী-কন্যাসহ হাতিরঝিলে বসে থাকতাম এনজিও কর্মীদের ভয়ে। অথচ এখন আমার কোনো ঋণ নেই…'
পাশে থাকা হালিমা সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, 'তওবা করেছি, এ জীবনে না খেয়ে মরলেও ঋণ করব না।'
২০১৭ সালে জামশেদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শুরুতে হালিমা টেইলার্সের দোকান চালাতেন। জামশেদ অন্য জায়গায় কাজ করতেন। দুজনের আয়ে সংসারও ভালোই চলছিল। দোকানে দুজন কর্মচারীও ছিল। দোকানের আয় থেকেই তাদের বেতন মিটিয়ে প্রতিমাসে বাড়িতে বাবা-মার কাছেও টাকা পাঠাতেন হালিমা।
তবে করোনা মহামারির কারণে তাদের ব্যবসায় লোকসানের শুরু। দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, বাড়ি ভাড়া, সংসারের খরচ এসব চালাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা।
উল্লেখ্য, প্রতিবেদনটিতে এ দম্পতির ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।