সাফটা চুক্তির শর্ত মানতে ভারতকে চিঠি বাংলাদেশের
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ক্ষেত্রে নতুন কাস্টমস রুলস প্রয়োগ না করতে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। চিঠিতে সাফটাসহ যেসব আঞ্চলিক চুক্তির আওতায় ভারতে বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সেগুলোর শর্ত মেন চলতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব চুক্তিতে সার্টিফিকেট অব রুলস অব অরিজিন ইস্যু এবং তা ভেরিফিকেশন কীভাবে হবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক কোনো বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ভারতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় না। তাই বহুপাক্ষিক আঞ্চলিক চুক্তির নিয়মই ভারতকে অনুসরণ করতে হবে।
সার্ক প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেডিং এগ্রিমেন্ট (সাপটা), সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া (সাফটা) ও এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আপটা) এর আওতায় মদ ও তামাক জাতীয় ২৫টি পণ্য পণ্য বাদে সকল পণ্যে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাচ্ছে।
সাফটা চুক্তি অনুযায়ী, ভারতে রপ্তানি করা বাংলাদেশি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব অরিজিন ইস্যু করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। পণ্য ছাড় করার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কোন ভেরিফিকেশনের দরকার হলে ভারতের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইপিবির মাধ্যমে তা যাচাই করে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা ভারতের নতুন 'কাস্টমস রুলস ২০২০'-এ ভেরিফিকেশনের ক্ষমতা দেশটির কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাতে দেয়া হয়েছে। দেশটির আমদানিকারকদের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে পণ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া কিংবা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মো. শহিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা ভারতকে বহুপাক্ষিক আঞ্চলিক চুক্তিগুলো মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এজন্য ভারতকে সাফটার বৈঠক ডেকে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনারও প্রস্তাব দিয়েছি।'
ভারতের নতুন কাস্টমস রুলস অনুযায়ী, ভেরিফিকেশন চলাকালে ভারতে কাস্টমস কর্মকর্তারা ইচ্ছা করলে শুল্কমুক্ত সুবিধা না দিয়ে পণ্য ছাড় করতে পারবেন, কিংবা ভেরিফিকেশন নোটিশ ইস্যুর ৬০ দিনের মধ্যে আমদানিকারক ওই পণ্যের বিস্তারিত তথ্য না দিলে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করতে পারবেন। একবার কোনো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কোনো পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা না পেলে ওই প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি করা ওই পণ্যকে আর কখনই শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় করবে না ভারত।
নতুন রুলসের কারণে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন, ইপিবির কর্মকর্তা ও রপ্তানিকারকরা। এ নিয়ে ১৭ নভেম্বর ইপিবি ও ট্যারিফ কমিশন এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া চেম্বার, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএসহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে।
ভারতের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। এসব দেশ রুলস অব অরিজিন কিভাবে যাচাই করবে, তা চুক্তিতে বলা আছে।
এ বিষয়ে কোন সংশয় দেখা দিলে সদস্য দেশগুলো আলোচনার ভিত্তিতে তা সমাধান করবে। তাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন কাস্টমস রুলস কার্যকর করার আগে সাফটায় এ নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আলোচনার ভিত্তিতেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
২০০৪ সালে ইসলামাবাদে সার্কের দ্বাদশ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ সাফটা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। পরে আফগানিস্তান সাফটায় যুক্ত হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ভারতের নতুন রুলসের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিতে যে অসুবিধা হবে, তা আমরা কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় চিঠি লিখে দেশটিকে জানালাম। ভারত এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়, তা দেখে বাংলাদেশ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।
তিনি বলেন, সাফটা, আপটা, সাপটা চুক্তিতে সার্টিফিকেট অব রুলস অব অরিজিন কে ইস্যু করবে, কীভাবে তার ভেরিফিকেশন হবে- তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সিগনেটরি কান্ট্রি হিসেবে ভারত এককভাবে বহুপাক্ষিক এসব চুক্তি লঙ্ঘন করে নতুন কোন রুলস চাপিয়ে দিতে পারে না।
রপ্তানিমুখী নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দু-তিন বছর ধরে সাফটার আওতায় ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। সে কারণেই নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার হিসেবে ভারত নতুন কাস্টমস রুলস করেছে।'
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.০৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। পাট ও পাটপণ্য, লেদার ও লেদারগুডস, সবজি ও তৈরি পোশাক বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। একই বছর ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ৫.৭৭ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪.৬৮ বিলিয়ন ডলার।