‘মা, মা, হোয়ার ইজ মাই পা’

দুই পঙক্তির ছড়ার প্রথম পঙ্ক্তি এই লেখাটির শিরোনাম। পরের পঙক্তি: 'গন টু দ্য হোয়াইট হাউস হা হা হা'।

মা, মা, আমার বাবা কোথায়? হোয়াইট হাউসে চলে গেছে হা হা হা।

বহুসন্তানের জনক ছিলেন আমেরিকার ২২ ও ২৪তম প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। এর মধ্যে এক সন্তান বিশেষভাবে পরিচিত নাম, অস্কার ফলসাম ক্লিভল্যান্ড। আর তার মায়ের নাম মারিয়া হ্যালপিন।

বাবা স্টিফেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড আমেরিকার ইতিহাসে একমাত্র প্রেসিডেন্ট যার বিয়ে বহির্ভূত সন্তানের বাবা হবার কাহিনী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পুস্তিকা ছেপে ভোটারদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। বিবাহবহির্ভূত সেই সন্তানই অস্কার ফলসাম ক্লিভল্যান্ড। স্টিফেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট অবস্থায় বিয়ে করেছেন। তার সাথে তার স্ত্রী বয়সের ব্যবধান ছিল ২৭ বছর ১২৫ দিন। সর্বোচ্চ ব্যবধানের রেকর্ডটি তাদের নয়। যুক্তরাষ্টের দশম প্রেসিডেন্ট জন টাইলারের সাথে তার স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য ৩০ বছর ৩৬ দিন, ক্লিভল্যান্ড দম্পতি দ্বিতীয় অবস্থানে, ডোনাল্ড ট্রাম্প চতুর্থ অবস্থানে, মেলানিয়ার চেয়ে তিনি ২৩ বছর ৩১৬ দিনের বড়। সবচেয়ে কম ব্যবধান সপ্তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন ও তার স্ত্রীর, ব্যবধান ৯২ দিন। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডের অধিকারী ক্লিভল্যান্ড দুটি বিচ্ছিন্ন সময়ে (নন-কনজিকিউটিভ) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।

স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনে প্রকাশিত অ্যাজেলা সেরাটোরের 'অ্যানাদার ভয়েস ফর ক্লিভল্যান্ড' থেকে বেশ খানিকটা নিয়ে এই কাহিনীটি তুলে ধরছি।

১৮৮৪ সালের আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পদ প্রার্থী গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারির অভিযোগ রাষ্ট্র হয়ে গেল। অথচ তিনি সবার কাছে 'গ্রোভার দ্য গুড' নামে পরিচিত ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনও সততার জন্য সবার শ্রদ্ধেয় ছিলেন।

গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড

তার বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে লাগে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী জেমস জি ব্লেইনের সমর্থকগণ। ১০ বছর আগে মারিয়া হ্যালপিন নামের এক বিধবার সন্তান ক্লিভল্যান্ডের বলে দাবি করা হলে তিনি তা হতেও পারে বলে মেনে নেন, পিতৃত্ব স্বীকার করে সন্তানকে একটি এতিমখানায় রাখার বন্দোবস্ত করেন এবং মারিয়াকে পাঠান একটি মানসিক আশ্রমে।

১৮৮৪-র নির্বাচনের ঠিক আগে শিকাগো ট্রিবিউন এক যাজকের চিঠি প্রকাশ করল: 'আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে: আমেরিকার জনগণ কি একজন নিছক লম্পটকে তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পেতে চান কিনা?' রিপাবলিকানদের প্রার্থী জেমস জি ব্লেইন কংগ্রেসে সমর্থনের বিনিময়ে বিভিন্ন কায়েমি স্বার্থবাদীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করেছেন, তা প্রমাণিত এবং তিনি যথেষ্ট নিন্দিত। ডেমোক্র্যাটরা যখনই সুযোগ পাচ্ছে তখনই এই প্রসঙ্গ সামনে তুলে ধরছে। আর তাদের প্রার্থী নিউ ইয়র্কের গভর্নর গ্লোভার ক্লিভল্যান্ডকে নিয়ে ছড়া কাটা হচ্ছে: 'মা, মা, হোয়ার ইজ মাই পা'?

ভোটারের সামনে তখন পছন্দের প্রশ্ন: কে রাষ্ট্রের জন্য কম ক্ষতিকর- লম্পট না দুর্নীতিবাজ?

অনেকেরই জানা একটি পিতৃত্ব কাহিনী ২১ জুলাই ১৮৮৪ সালে বাফেলোর ইভনিং টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ছাপা হলো- ১০ বছর আগে মারিয়া হ্যালপিন নামের এক মহিলার গর্ভজাত পুত্রের বংশ নাম রাখা হয় ক্লিভল্যান্ড। সেই নারীকে মানসিক আশ্রমে এবং তার পুত্রকে এতিমখানা থেকে অপর একটি পরিবারের হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল।

ক্লিভল্যান্ডের নির্বাচন প্রচারকর্মীরাও জানেন এই অভিযোগ উড়িয়ে দেবার নয়, আবার সরাসরি মেনে নেওয়া ঠিক হবে না। তারা বললেন, ক্লিভল্যান্ড তখন যুবক আর এই নারী লাস্যময়ী, এটা এমন দোষের কিছু নয়, অনেক যুবকের সাথেই এই নারীর সম্পর্ক ছিল। কার সন্তান তা কে জানে? তবে ক্লিভল্যান্ডের উদারতা যারই হোক তিনি এই শিশু ও নারীকে রক্ষা করার জন্য নিজের বলেই মেনে নিয়েছেন। এটা তো তার মহৎ দিক। এটা তো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে অন্তরায় হবার কথা নয়।

যুবক বয়সের ক্লিভল্যান্ড

ছেলের নাম অস্কার ফলসাম ক্লিভল্যান্ড। ক্লিভল্যান্ড নিজেই খোলাসা করলেন, বাচ্চাটি আমারও হতে পারে আমার ঘনিষ্ট বন্ধু অস্কার ফলসামেরও হতে পারে। ছেলের নামের সাথে দুজনের নামই যোগ করা আছে। বলা আবশ্যক তখন ডিএনএ টেস্ট সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারনাই ছিল না। ১৯৮৪-র নির্বাচনে ১০২ বছর পর ১৯৮৬ সালে  প্রথম একটি ফৌজদারি মামলায় ডিএনএ টেস্ট করা হয় এবং আরো দুই বছর পর ১৯৮৮ সালে প্রথম পিতৃত্ব নিশ্চয়নের ডিএনএ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের ভাষ্য ভোটারদের একটি অংশ ভালোভাবেই গ্রহণ করে বলে মনে হয়, কম সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে হলেও জেমস ব্লেইনকে পরাজিত করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ২২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিক মারিয়া হ্যালপিনকে খুঁজে বের করতে সমর্থ হন এবং তার কাজ থেকে যে বিবৃতি গ্রহণ করে প্রকাশ করেন তার সাথে ক্লিভল্যান্ডের বক্তব্যের যথেষ্ট অমিল পাওয়া যায়। দশ বছর আগে ১৮৭৪ সালে হ্যালপিন ৩৮ বছর বয়স্ক বিধবা ছিলেন। শিকাগো ট্রিবিউনের ভাষ্য:

হ্যালপিন বলেছেন ক্লিভল্যান্ড অবিরাম তাকে পেতে চেষ্টা করতেন, শেষ পর্যন্ত তিনি ওশেন ডাইনিং হল অ্যান্ড ওয়েস্টার হাউসে তার সাথে ডিনার করতে সম্মতি জানান। ডিনারের পর ক্লিভল্যান্ড তাকে তার বোর্ডিং হাউসে নিয়ে যান। ১৮৭৪ সালেরই একটি এফিডেবিটে তিনি উল্লেখ করেছেন ক্লিভ সেখানে তার কক্ষে প্রবেশ করে এবং তার সম্মতি ছাড়াই জোর খাটিয়ে তার সাথে সহবাস করেন। মারিয়া হ্যালপিন যদি এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান তাহলে তিনি তাকে ধ্বংস করে ফেলবেন বলে হুমকি দেন।

হ্যালপিন কখনো আর তার সাথে দেখা করবেন না বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু পাঁচ-ছয় সপ্তাহ পরে এমন একটি বিশেষ সমস্যার জন্য তাকে ক্লিভল্যান্ডের কাছে আসতে হয় যে সমস্যার সমাধান কেবল তার পক্ষেই করা সম্ভব। কারণ তিনি তখন গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন।

মারিয়া হ্যালপিন

নয় মাস পর তার পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলে শিশুটিকে দ্রুত তার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। হ্যালপিনের মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তারের সাক্ষাৎকার নিয়ে শিকাগো ট্রিবিউন লিখে: প্রভিডেন্স অ্যাসাইলামের ডাক্তার ও গণ্যমান্য নাগরিক ডাক্তার উইলিয়াম জি জে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন মারিয়া হ্যালপিনের কথা তার স্পষ্ট মনে আছে। বিধিবিধান না মেনে তাকে এখানে আনা হয়, যদিও মারিয়া প্রচুর মদ্যপান করছিল তাকে মানসিক রোগগ্রস্ত মনে হয়নি। মানসিক আশ্রমের ম্যানেজারের সুস্থ্য কাউকে আটকে রাখার ক্ষমতা নেই, তিনি কদিন পর নিজে থেকে চলে যান।

বাফেলো অরফ্যান এতিমখানা, এখানেই ক্লিভল্যান্ডের বিবাহবহির্ভূত সন্তান অস্কারকে আনা হয়েছিল

মানসিক আশ্রম থেকে মুক্তির পর হ্যালপিন বাফেলো এলাকার আইনজীবী মাইলো এ হুইটনির সাথে সাক্ষাৎ করে ক্লিভল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাকে আঘাত করার ও সন্তান অপহরণের মামলা করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন। হুইটনি প্রতিবেদককে বলেন মারিয়া হ্যালপিন জানতেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড লোক লাগিয়ে এমনটাই করবেন, কারণ বল প্রয়োগে সন্তানকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা তিনি আগেই করেছেন।

হুইটনি বলেন, এই সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারের পক্ষ মারিয়া হ্যালপিন তার একজন আত্মীয়কে নিয়ে আবার তার কাছে আসেন এবং একটি দলিল দেখান। তাতে বলা হয়েছে ক্লিভল্যান্ডের কাছ থেকে ৫০০ ডলার বুঝে পেয়ে অস্কার ফলসাম ক্লিভল্যান্ডের দাবি সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছেন এবং সন্তানের বাবার কাছে কখনো কোনো দাবি নিয়ে যেতে পারবেন না।

হুইটনি বলেছেন, দলিলের হাতের লেখা গ্লোভার ক্লিভল্যান্ডের। সন্তানের মাঝখানের নামটি ক্লিভল্যান্ডের বন্ধুর এবং ডাক্তার কিং-ই এ ছেলেটিকে দত্তক গ্রহণ করেন এবং তার মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে বাফেলোতেই লালন পালন করেন। সন্তানটি অন্য যে কারোর হতে পারে, ক্লিভল্যান্ডের এই বক্তব্যে ১৮৮৪ সালে সাক্ষাৎকারের সময় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং বলেন তার সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই। বাকী সব মিথ্যে কথা। হ্যালপিন তখন নিউ ইয়র্কে থাকতেন, সে সময় নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড লিখে: বয়স ৪৫ বা ৫০ হলেও তাকে আকর্ষণীয় দেখায় এবং কোনোভাবে পয়ত্রিশোর্ধে বলে মনে হয় না।

যুবক ক্লিভল্যান্ড এবং মারিয়া হ্যালপিন

এই পত্রিকা তার শরীরের একটি মুখরোচক বর্ণনাও দেয়। তখনকার প্রধান পত্রিকাগুলো লিখে এমন একজন ভালো নারীর সাথে যিনি লাম্পট্য করে বেড়ালেন তাকে কি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট করা যায়? পত্রিকা এটা উল্লেখ করে: নাকি মারিয়া বারের একজন বারবনিতা কেবল টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে একজন মর্যাদাবান প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থীর সাথে এমনটা করে চলেছেন?

ডেমোক্র্যাটদের পত্রিকার সানডে মার্কারিতে ক্লিভল্যান্ডের পক্ষে অনেক লিখা হলো, রিপাবলিকানদের কোলে বসা মারিয়ার চরিত্র নিয়ে আরো প্রশ্ন তুলল। ১৮৮৪-র শরতে ক্লিভল্যান্ডের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর লেখাটি লিখেনেন ইউনাইটেড প্রেসবাইটেরিয়ান চার্চের যাজক হেনরি ডব্লিউ ক্যাবে, আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে গ্লোভার ক্লিভল্যান্ড দুর্নীতিপরায়ন ও কামুক ধরনের মানুষ। তিনি কখনো বিয়ে করেননি, নারীদের সাথে তার আচরণ ভালো নয়। ক্লিভল্যান্ড এখানে পরিচিত, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে তিনি গভর্নরের আসনটি পেয়েছেন। আমার আন্তরিক ও একান্ত প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট না হন। তার যৌনজীবন পর্যালোচনা করলে তার সত্যিকার চরিত্র ফুটে উঠবে। বলা যেতে পারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কোনোটাই সে খন্ডন করতে পারবে না।

ক্লিভল্যান্ডের সমর্থকরা বিষয়টিকে তারুণ্যের চাপল্য বলে উড়িয়ে দিলেন, যদিও মারিয়ার সাথে তার দৈহিক সংসর্গের ঘটনা যখন ঘটে তখন ক্লিভল্যান্ডের বয়স প্রায় চল্লিশ বছর। এটা সত্য যে তিনি তখনও অবিবাহিত।

নারী ঘটিত কলঙ্ক সম্ভবত ভোট আরও বাড়ায়। অল্প ভোটের ব্যবধানে হলেও ক্লিভল্যান্ড আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। পত্রিকাগুলোও মারিয়ার কথা ভুলে মনোনিবেশ করল ফ্রান্সেস ফলসামের উপর। এই ফ্রান্সেস তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অস্কার ফলসামের ২১ বছর বয়সী কন্যা। এই ফলসাম আর ক্লিভল্যান্ড উভয়েই মারিয়ার সঙ্গ উপভোগ করেছেন। হতে পারে ততদিনে দশ বছরের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া ছেলেটি ফ্রান্সেসেরই ভাই।

ফ্রান্সেস ক্লিভল্যান্ডে

স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ জেমস ই কিং জুনিয়র

অস্কার ফলসাম ক্লিভল্যান্ড লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলেন সম্ভবত নামও বদলালেন। অনেকেই মনে করেন বাফেলো শহরের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ জেমস ই কিং জুনিয়রই সেই সন্তান। তিনি ১৯৪৭ সালে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

মারিয়া হ্যালপিনের সন্তান ডাক্তার জেমস ই. কিং। গ্লোভারের সন্তান

মারিয়া পুনরায় বিয়ে করেন এবং নিভৃত জীবনের এক পর্যায়ে ১৯০২ সালে মারা যান।

ক্লিভল্যান্ড একমাত্র প্রেসিডেন্ট যে হোয়াইটহাউসে বিয়ে করেন

গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের সন্তান কাহিনী বাদ দিয়ে তাকে আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের একজন মনে করা হয়। তার জন্ম ১৮ মার্চ ১৮৩৭ কন্ডওয়েল শহরে। বাবা রিচার্ড ক্লিভল্যান্ড ছিলেন ধর্মযাজক, মা পুস্তক ব্যবসায়ীর মেয়ে। নয় সন্তানের পঞ্চম স্থানে স্টিফেন তার পুরো নাম স্টিফেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড, কিন্তু প্রথম নামটি তলিয়ে গেছে, এমন সাধারণত হবার কথা নয়। 

২ জুন ১৮৮৬ হোয়াইট হাউসের ব্লুরুমে ফ্রান্সেস ও ক্লিভল্যান্ডের বিয়ে
কিশোর অবস্থায় বাবার মৃত্যু হলে তাকে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে প্রথমে স্কুল শিক্ষক ও কেরানির চাকরি নিতে হয়। তবে এর মধ্যে তিনি আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ল ফার্মে যোগ দেন, ১৮৫৯ সালে নিউ ইয়র্ক বারে। গৃহযুদ্ধ চলাকালে ১৮৬৩ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার বাধ্যতামূলক আইন দ্য কনস্কিপশন অ্যাক্ট অনুযায়ী তার সৈন্যবাহিনিতে যোগ দেবার কথা। এই আইনে একটি সুযোগ রাখা হয়, কেউ যেতে না পারলে তাকে একজন বিকল্প যোগাড় করে দিতে হবে। ক্লিভল্যান্ড ১৫০ ডলার ২০১৯ সালের তুল্যমূল্য ৩১১৫ ডলার, দিয়ে একজন পোলিশ অভিবাসী জর্জ বেনিনস্কিকে তার বদলে যুদ্ধ যেতে রাজি করান। তিনি যুদ্ধ শেষে হবার পরও টিকে ছিলেন।

১৮৭০ সালে তার বন্ধু ডেমোক্র্যাট অস্কার ফলসামের সহায়তায় নিউ ইয়র্কের একটি কাউন্টির শেরিফ পদে নির্বাচনে জিতে যান্, ফলে তার একটি রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়। সেকালে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিদের নিজের হাতে দন্ড কার্যকর করতে হতো, তিনি নিজের হাতে দুজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেন।

১৮৭২ তিনি যখন বাফেলোতে থেকে কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হলেন কেউ ভাবেননি মাত্র চার বছরের ব্যবধানে এই সাদামাটা বড়দেহের মানুষটি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন। দ্রষ্টব্য: সে সময় তার ওজন ছিল ২৭৫ পাউন্ড।

পুননির্বাচনের সময় ক্লিভল্যান্ডের নির্বাচনী পোস্টার

কেউ ভাবেননি গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড আবার প্রেসিডেন্ট হবেন। চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন, চার্চের বিরোধিতা এবং সেক্রেটারি অব স্টেটের মতো প্রতিপক্ষকে ১৮৮৪-র নির্বাচনে হারিয়ে তিনি আমেরিকার ২২তম প্রেসিডেন্ট হলেন। কিন্তু ১৮৮৮-র নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। ১৮৯২-র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট শিবিরে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের চেয়ে যোগ্য কোনো প্রার্থী ছিল না। এবার তিনি বিপুল ব্যবধান সৃষ্টি করে আমেরিকার ২৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে। 
 
প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি

২৪৫ বছরের ইতিহাসে এক টার্ম বাদ দিয়ে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হবার নজির নেই। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সংহত করার কৃতিত্ব তার। তিনি ১৮৯৬-র নির্বাচনেও ডেমোক্র্যাটদের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু তাকে আর দেওয়া হয়নি। ১৮৯৬ সালেই ৭১ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

গ্লোভারের শেষ ছবি

প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার একটি স্মরণীয় উক্তি: জনগণ যদিও সরকারকে সমর্থন করে, সরকার জনগণকে সমর্থন করে না। তার আরও একটি উক্তি: গণতন্ত্রের যে জাহাজ সমুদ্রের সব ঝড় মোকাবেলা করল, জাহাজের ভেতরের বিদ্রোহে তা ডুবে যেতে পারে।