বিশ্বের সুরক্ষায় পুরো একটি প্রদেশকে বলি দিচ্ছে চীন
সঙ্গীতশিল্পী ঝেং ইয়ারুর অসুস্থ দাদিমা গত সোমবার গভীর কোমায় চলে যান। পরবর্তী সময়ে অচেতন অবস্থাতেই মারা গেছেন তিনি। এর আগে অনেকবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। করোনা ভাইরাসে অসুস্থ মাকে নিয়ে সঙ্কটে পরেছেন কলেজ স্নাতক জন চেন। সাহায্য তিনিও খুঁজছেন সবখানে। কিন্তু ভর্তি হতে হলে রোগীদের হাসপাতালের লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। তীব্র জ্বর নিয়ে চেনের মা অবশ্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো অবস্থায় নেই।
চীনে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের গ্রাউন্ড জিরো হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে এসব এখন নিত্যদিনের মানবিক ট্র্যাজেডির গল্প। ভাইরাসের প্রকোপে যখন পুরো শহর আক্রান্ত ঠিক তখনই এসব মানবিক অনুগল্প বিশ্ব গণমাধ্যমের সংবাদে স্থান পাচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গের।
ভাইরাসের প্রসার রোধে শুধু উহান নয় বরং পুরো হুবেই প্রদেশকেই এখন বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে চীনা কতৃপক্ষ। কারণ পুরো বিশ্বে এখন পর্যন্ত যতো মানুষ নভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এবং মারা গেছেন তার ৯৭ শতাংশই হয়েছে হুবেইতে। মোট রোগী সংখ্যাতেও ৬৭ শতাংশ উপস্থিতি এই অঞ্চলের। ফলে ভাইরাস প্রতিরোধের সরকারি চেষ্টাকে দোষ দেওয়া সম্ভব নয়।
এর ফলে হুবেই প্রদেশে প্রয়োজনীয় হাসপাতাল শয্যা, চিকিৎসক, সেবাকর্মী এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সঙ্কট দেখা যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কার্যকর প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত এটাই চীনের কাছে খোলা থাকা একমাত্র রাস্তা। এর মাধ্যমে শুধু বাকি চীন নয় বরং গোটা বিশ্বকে সুরক্ষার চেষ্টায় সাহায্য করছে চীন।
হুবেই প্রদেশে প্রায় ৬ কোটি মানুষের বসবাস। এই বিপুল জনসংখ্যার স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সহজ কথা নয়। তাইতো ঘুম নেই স্থানীয় সেবাকর্মীদের চোখে। শ্বাসনালী বিশেষজ্ঞ ৩০ বছরের এক চিকিৎসক গত দুই সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছেন। বাকিটা সময় গেছে জরুরি বিভাগে ক্রমশ বেড়ে চলা গুরুতর অসুস্থদের সেবা করতে করতে।
এই আপ্রাণ চেষ্টা খুব একটা কাজে আসছে না তা বলাই বাহুল্য। হুবেই প্রদেশে ভাইরাসটি এমন প্রাণঘাতী রূপ ধারণ করেছে যে মৃতের সংখ্যা এখন প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টার মাঝে হুবেইতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রতি শতাংশ আক্রান্তের মাঝে ৩ দশমিক ১ শতাংশে। সেই তুলনায় চীনের অন্যান্য অঞ্চলে আক্রান্তদের মাঝে মাত্র দশমিক ১৬ শতাংশ মারা গেছেন।
এদিকে, বিশেষজ্ঞদের অনুমান উৎসস্থলে ভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো ম্যাস কোয়ারেন্টিন। কিন্তু প্রতিষেধক না থাকায় বিশেষ মুহূর্তে এমনটা করাই উচিৎ। নিষ্ঠুর সত্য এই বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
চীনের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সাবেক উপ মহাপরিচালক ইয়াং গংহুয়ান এমন কথাই বলেছেন। তিনি জানান, যদি হুবেইকে বিচ্ছিন্ন না করা হতো তাহলে কিছু রোগী চীনের অন্য এলাকায় চিকিৎসা করাতে যেতে পারতেন ঠিকই কিন্তু এর ফলে পুরো দেশ একটি মহামারি কবলিত এলাকায় রূপ নিতো। কোয়ারেন্টিন হুবেই এবং উহানের মানুষকে অশেষ কষ্টের ভেতর ফেলেছে বটে, কিন্তু এটাই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত। এটা কোনো অংশেই যুদ্ধকালীন সময়ের চাইতে কম কিছু নয়। তাই কিছু হৃদয় বিদারক সিদ্ধান্ত নিতেই হয়।