এমআইটি ও ক্যালটেকের যাত্রা: সব প্রতিকূলতা জয় করল যেভাবে দেশের দুই শিক্ষার্থী
চলার পথে সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে এক অনন্য অর্জনের নজির গড়েছেন বাংলাদেশের দুই মেধাবী শিক্ষার্থী চাঁদপুরের নাফিস উল হক সিফাত এবং ময়মনসিংহের সানজিদা নুসরাত অনন্যা। তারা দুজনে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি'তে (ক্যালটেক) পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে স্নাতক প্রোগ্রামে পড়ালেখা করার সুযোগ পেয়েছেন।
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এমআইটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগমন বেড়েছে, কিন্তু ক্যালটেকে পড়ার সুযোগ যে বিরল তা স্বীকার করতেই হবে। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্যালটেক একটি; এবং এ প্রতিষ্ঠানটিতে সুযোগ পাওয়া এতটাই কঠিন যে স্টেম(বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত) শিক্ষা খাতে সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় এটি জায়গা করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, আমেরিকায় মাথাপিছু সর্বাধিক নোবেলবিজয়ী- ৭৯ জনের নাম ক্যালটেকের সঙ্গে জড়িত এবং সরাসরি ক্যালটেকের ৪৬ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ফ্যাকাল্টি সদস্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন, যাদের মধ্যে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এবং রিচার্ড ফেইনম্যানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
একইভাবে, এমআইটিও তাদের উদ্ভাবনী শিক্ষণ পদ্ধতি, অত্যাধুনিক গবেষণা এবং ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীদের জন্য বিখ্যাত। ১০০ নোবেল বিজয়ীর সাথে সম্পর্কযুক্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়টির এমন সব যুগান্তকারী আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ইতিহাস রয়েছে যা বিশ্বে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
অনন্যার সফলতার পথে যাত্রা
অনন্যার শিক্ষাজীবনকে ঠিক গতানুগতিক বলা চলে না। অনন্যার বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইলে, মাধ্যমিক পাশ করেছেন সেখান থেকেই। এসএসসি পাশের পর তিনি ময়মনসিংহ চলে আসেন এবং ২০২১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। গণিত ও পদার্থবিদ্যার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ থাকায় বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনন্যা।
"বুয়েটে পড়া ছিল তখন আমার একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিলের দিকে যখন দেখলাম আমি বুয়েটে ভর্তির জন্য যোগ্য নই , তখন আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়", বলেন অনন্যা।
বুয়েটে চান্স পাওয়ার জন্য পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও সাধারণ গণিত মিলিয়ে মোট নম্বরে ঘাটতি থাকায় ভর্তি ফর্ম তুলতে পারেননি অনন্যা। কিন্তু তার জন্যে চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকার মেয়ে ছিলেন না তিনি। প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে তিনি এক বছরের বিরতি নেন এবং পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম ও গবেষণা কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। এরপরে তিনি ঢাকার কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হন এবং চলতি বছরের মে মাসে এখান থেকেই এ-লেভেল পরীক্ষা দেবেন তিনি।
বুয়েট থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মাত্র এক মাসের মাথায় অনলাইনে নতুন সুযোগ খুঁজতে থাকেন অনন্যা; কারণ তিনি জানতেন যে তিনি স্টেম শিক্ষার মধ্যেই থাকতে চান।
"সেসময় আমি 'বাংলাদেশ বিয়ন্ড বর্ডার' নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ খুঁজে পাই, যা এমআইটি, ক্যালটেক ও হার্ভার্ডের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মিলে তৈরি করেছেন। এরপরেই আমি আমার পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি", বলেন অনন্যা।
সর্বপ্রথম স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সামার ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম স্পিনউইপ (SPINWIP)-এ ডাক পান অনন্যা; এর জন্য তার বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের স্বীকৃতিকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। স্ট্যানফোর্ডে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে থাকার সময় অধ্যাপক রিসা ওয়েকসলারের একটি সেশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন অনন্যা; এরপরেই গবেষণার প্রতি তার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
অনন্যা বলেন, "এরপর আমি নিউইয়র্ক একাডেমি অব সায়েন্সেস-এ যোগ দেই এবং বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাঁচ বন্ধুর সাথে চারটি গবেষণা প্রকল্পে কাজ করি। সেই সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের 'কোল্ড-ইমেইল' পাঠানো অব্যহত রাখি এবং উল্লেখযোগ্য সামার প্রোগ্রামগুলোতে আবেদন করতে থাকি- যেমন, ইলিনয় সামার প্রোগ্রাম এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি অধ্যাপক মাহতাব জাফারির সঙ্গে কাজ করেছি।"
একের পর এক গবেষণা এবং এলজাভিয়ারসহ বিভিন্ন কনফারেন্সে একাধিক পাবলিকেশনের পর অনন্যা টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ সায়েন্স সেন্টারের ক্লিনিশিয়ান অধ্যাপক নাজনিন এস আহমেদ এবং কর্নেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জিলিয়ান গোল্ডফার্বের সাথে কাজ করার সুযোগ পান।
সৌভাগ্যবশত, অনন্যা তার শিক্ষাগত জীবনের পুরো সময়টাই নিজের বাবা-মাকে পাশে পেয়েছেন। অনন্যার বাবা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। অনন্যা তার বাবারও একটি থিসিসের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং নেটিভ সোসাইটিতে ঔষধি ভেষজের ব্যবহার নিয়ে তাদের সর্বশেষ গবেষণায়ও অংশগ্রহণ করেছেন।
অনন্যার বাবা বলেন, "আমি এবং আমার স্ত্রী সবসময় অনন্যার পাশে ছিলাম এবং ওকে ওর লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছি। ওর বিদেশে যাওয়া নিয়ে আমি দুয়েকবার আপত্তি তুললেও, ওর মা সবসময় ওকে সমর্থন দিয়েছে।"
গবেষণা কাজের পাশাপাশি অনন্যা গণিত অলিম্পিয়াডেও অংশ নিয়েছেন। হার্ভার্ড-এমআইটি ম্যাথ টুর্নামেন্টে ফাইনালিস্ট ছিলেন তিনি। এছাড়াও, আমেরিকান ম্যাথমেটিকস কম্পিটিশন (এএমসি) ১২-তে অংশগ্রহণ করেছেন অনন্যা। এএমসিতে তিনি শীর্ষ ৫ শতাংশের মধ্যে একজন ছিলেন এবং 'অনার রোল'-এ ভূষিত হন। এর মাধ্যমে তিনি আমেরিকান ইনভাইটেশনাল ম্যাথমেটিকস এক্সামিনেশনে (এআইএমই) অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেন।
অনন্যার ভাষ্যে, "এআইএমই আমাকে ইউএসএ ম্যাথ অলিম্পিয়াড ২০২৩-এ অংশগ্রহণ ও কোয়ালিফাই করতে সাহায্য করেছে।"
কম্পিউটেশনাল বায়োলজি ও নিউরোসায়েন্স নিয়ে গবেষণার প্রতি অনন্যার আগ্রহ তাকে বায়োলজিক্যাল সায়েন্স নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ করে দেয়।
"২০২১ সালে আমি ব্রিটিশ বায়োলজি অলিম্পিয়াড (বিবিও) থেকে স্বর্ণ ও ২০২২ সালে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছি। তখন আমাকে বিবিও পদকপ্রাপ্ত হিসেবে রয়্যাল সোসাইটি অব বায়োলজিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।"
এখানেই শেষ নয়, অনন্যা ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন অলিম্পিয়াডেও অংশ্রগ্রহণ করেন এবং সেখানে তিনি সারা বিশ্বের প্রতিযোগীদের মধ্যে দ্বিতীয় হন। ইউএসএ মেডিসিন অলিম্পিয়াডে কোয়ালিফাই করার পর বাংলাদেশের হয়ে প্রথম স্বর্ণপদক জেতেন অনন্যা। এছাড়াও, ইন্টারন্যাশনাল জিনিয়াস অলিম্পিয়াডে প্রথম অনারেবল মেনশনের মর্যাদা অর্জন করেন অনন্যা এবং রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ২৫ হাজার ডলার পুরস্কার পান।
"স্টেম শিক্ষার প্রতি আমার যে প্যাশন, এটিই আমাকে নানা বৈচিত্র্যময় খাতে কাজ করার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে", একথা বলে ইতি টানেন অনন্যা।
সিফাতের সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প
"এমআইটি থেকে একসেপ্টেন্স লেটার পাওয়ার অনুভূতিটা আমি কোনোদিন ভুলবো না। ১৫ মার্চ গভীর রাতে খবরটা পেয়েই আমি উত্তেজনায় বাড়ির সবাইকে ঘুম থেকে তুলে খবরটা জানিয়েছিলাম", হাসিমুখে বললেন সিফাত।
সিফাত যখন ছোট, তখন তার বোন তাকে জাফর ইকবালের লেখা 'গণিতের মজা, মজার গণিত' নামের একটি বই দিয়েছিলেন। এই বই পড়েই গণিতের প্রতি তার আগ্রহ শুরু এবং আস্তে আস্তে তিনি পাঠ্যবইয়ের বাইরেও গাণিতিক ধাঁধা ও অংক সমাধান করার দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
"ওই বইটা আমাকে দেখিয়েছিল যে, আমাদের যেভাবে গণিত শেখানো হয়, গণিত তার চেয়েও অনেক মজার। আমার পরবর্তীতে প্রোগ্রামিং নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠার কারণও এটাই", বলেন সিফাত।
পরিবারের সঙ্গে চাঁদপুরে বসবাসরত সিফাত এববছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন। তার মা হাজিগঞ্জ মডেল কলেজের একজন শিক্ষক এবং বাবা রয়মনেন নেসা উইমেন কলেজের অধ্যাপক। সিফাত তাদের দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট। তার বড় বোন বর্তমানে নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
সিফাত বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের ন্যাশনাল রাউন্ডে প্রথম রানার আপ ছিলেন এবং ২০১৯ সালে নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি জুনিয়র ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ২০২১ এবং ২০২২ ন্যাশনাল রাউন্ডে যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং প্রথম রানার আপ হয়ে ন্যাশনাল ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন।
২০১৯ সালে সিফাত বাংলাদেশ অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিকস (বিডিওআই)-এ অংশগ্রহণ করেন এবং ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড কমিউনিটির সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। "আমার ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য এই কমিউনিটির কাছে আমি কৃতজ্ঞ", বলেন সিফাত।
২০১৯ ও ২০২০ সালে দুইবার কোয়ালিফাই করার চেষ্টার পর ২০২১ ও ২০২২ সালে পরপর ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সিফাতকে নির্বাচন করা হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এমন একটা প্রতিযোগিতায় নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করাটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। উভয় বছরেই আমি ব্রোঞ্জ পদক জিততে সক্ষম হই।"
এছাড়াও, গত বছর এশিয়া প্যাসিফিক অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্সে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন সিফাত। আন্তর্জাতিক অর্জনের বাইরেও দেশের ভেতরে নানা প্রোগ্রামিং কনটেস্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন সিফাত। ২০২২ সালে বাংলাদেশ অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিকসে তিনি স্বর্ণপদক জয় করেন।
শিক্ষাগত জীবনের শুরু থেকেই চমৎকার ফলাফল করে আসা সিফাত জানান, গাণিতিক সমস্যা সমাধানকারীদের যে কমিউনিটি রয়েছে, তারাই তাকে আজকের এই সফলতা অর্জনের পেছনে সহায়তা করেছে।
"বহু অলিম্পিয়াড অংশগ্রহণকারীরা এমআইটির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করে। তাদেরকে দেখে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও চেষ্টা করেছিলাম", বলেন সিফাত।
স্টেম শিক্ষার সঙ্গে জড়িত এবং এটিকে মূল্যায়ন করে, এমন একটি পরিবার থেকে উঠে আসা সিফাত শুরু থেকেই জানতেন যে তিনি স্টেম শিক্ষাখাতেই যুক্ত থাকতে চান।
ক্যালটেক বা এমআইটিতে সুযোগ পেতে হলে কী কী প্রয়োজন?
- স্টেম শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কাজে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা এবং একাডেমিক অর্জন।
- আন্ডারগ্র্যাড প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার জন্য গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকা অত্যাবশ্যক নয়।
- ভর্তি পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাডমিশন পোর্টালে একটি একাউন্ট খুলতে হবে, ইংরেজিতে দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হবে, মেন্টরদের কাছ থেকে সুপারিশ(এলওআর) পেতে হবে এবং অ্যাডমিশনের জন্য সংক্ষিপ্ত রচনা লিখতে হবে।
- আন্ডারগ্র্যাড এর জন্য আবেদনে সাধারণত এসওপি'র বদলে সংক্ষিপ্ত রচনা লিখলেই চলে।
- রচনার মধ্যে অবশ্যই আবেদনকারীর বুদ্ধিমত্তা এবং ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার আবেগ ফুটিয়ে তুলতে হবে।
- এলওআর এবং রচনায় অবশ্যই আবেদনকারীর বিভিন্ন কাজের প্রভাব/সম্ভাবনার প্রতিফলন থাকতে হবে।
- পরীক্ষায় অন্তত ৭৫ শতাংশ স্কোর করতে পারাটা সহায়ক হবে।
- শিক্ষা-গবেষণাসহ নানা খাতে আগ্রহ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।