নেই যাত্রী, ট্যাক্সির ছাদে তাই সবজির বাগান!
করোনাভাইরাস সংকটকালে থাইল্যান্ডের যাত্রীবিহীন ট্যাক্সির ছাদগুলোকে সবজির ছোট বাগান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে 'ছাদ বাগান' ধারণাটিকে নতুন অর্থ দিচ্ছে অলসভাবে পড়ে থাকা ট্যাক্সিগুলো।
সম্প্রতি দেশটির দুটি ট্যাক্সি সমবায়ের শ্রমিকরা ট্যাক্সির ছাদে বাগান তৈরির এ উদ্যোগ নেন। বাঁশের কাঠামো তৈরি করে তাতে প্লাস্টিকের তৈরি আবর্জনা নেওয়ার ছোট ব্যাগ বসিয়ে ক্ষুদ্রকায় বাগান বানাচ্ছেন তারা। প্লাস্টিকের ব্যাগের ওপর মাটি বসিয়ে সেখানে টমেটো, শসা এবং স্ট্রিং বিন্স-সহ বিভিন্ন ফসল রোপণ করা হচ্ছে।
সবজির এ বাগান দেখতে একটি চোখ ধাঁধানো আর্ট ইন্সটলেশনের মতো মনে হয়। তাছাড়া, করোনাভাইরাসের ফলে দেওয়া লকডাউনের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাক্সিচালক ও অপারেটরদের দুর্দশার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করাও ছিল এ প্রকল্পের একটি উদ্দেশ্য।
৫৪ বছর বয়সী এক্সিকিউটিভ থাপাকর্ন আসওয়ালার্টকুলের মতে, দ্য রচাপ্রুক অ্যান্ড বোভর্ন ট্যাক্সি সমবায়ের প্রায় ৫০০টি গাড়ি রয়েছে ব্যাংককের রাস্তায়। এছাড়াও, শহরের অনেক জায়গায় তাদের ২ হাজার ৫০০টি গাড়ি যাত্রীবিহীনভাবে বসে আছে।
কিছুদিন আগেও দেশটির রাজধানীর রাস্তাগুলো বেশ ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও, যাত্রীরা কম ভাড়া দাবি করায় আয় কমে যায় চালকদের। থাপাকর্ন জানান, যানবাহনের চার্জ অর্ধেক কমিয়ে এনে ৩০০ বাত (৯.০৯ ডলার) করার পরেও যানবাহনের জন্য দৈনিক অর্থ প্রদানের সামর্থ্য নেই অনেকেরই। ফলে দীর্ঘ এ সারিতে গাড়ি রেখে চলে গেছেন চালকেরা।
তিনি বলেন, গত বছর যখন মহামারি প্রথম আঘাত হানে, তখন কিছু চালক সে পরিস্থিতি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাদের ট্যাক্সিগুলো রেখেই গ্রামাঞ্চলে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান। এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে আরও কিছু চালক তাদের গাড়ি ফেরত দিয়ে দেন।
থাপকর্ন আরও বলেন, 'কেউ কেউ তাদের গাড়িগুলো গ্যাস স্টেশনের মতো জায়গায় রেখে যান এবং সে গাড়িগুলো তুলে নেওয়ার জন্য পরবর্তীকালে আমাদের ডাক পড়ে।'
এই বছর ভাইরাসের নতুন রূপের সম্মুখীন হয়ে হাজারও চালক তাদের গাড়ি ফেরত দিয়ে দেওয়ায় সমবায়গুলো উপার্জন থেকে 'সম্পূর্ণভাবে ছিটকে' পড়ে, উল্লেখ করেন তিনি।
আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে থাইল্যান্ডে করোনা শনাক্ত বেড়ে ২৩,৪০০-এ পৌঁছায়। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশটিতে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা রয়েছে ১৫ হাজারের নিচে। সরকার আশা করছে, দেশটি করোনার আক্রমণ থেকে বেরিয়ে আসছে।
থাইল্যান্ডের মোট করোনা শনাক্তের ৯৭ শতাংশ এবং মোট মৃত্যুর ৯৯ শতাংশেরও বেশি ঘটে এ সময়েই। এ পর্যন্ত দেশটি করোনা শনাক্ত হয়েছে ১.৪ মিলিয়নের শরীরে; অন্যদিকে, এ ভাইরাসে ১৪ হাজারেরও বেশি জনের মৃত্যু ঘটেছে।
এ পরিস্থিতি ট্যাক্সি কোম্পানিগুলিকে আর্থিক বিপদের প্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। বহর কেনার জন্য লোন পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে তারা। থাপাকর্ন বলেন, দ্য রচাপ্রুক অ্যান্ড বোভর্ন সমবায়ের প্রায় ২ বিলিয়ন বাত (৬০.৮ মিলিয়ন ডলার) ঋণ আছে। সরকার এখন পর্যন্ত তাদেরকে সরাসরি কোনো আর্থিক সহায়তা দেয়নি।
বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে তিনি বলেন, 'যদি শিগগিরই আমাদের সাহায্য না করা হয়, তাহলে আমরা আরও বড় সমস্যায় পড়ব।'
এদিকে, যেসব সমবায় কর্মচারীর বেতন কাটতে বলা হয়েছিল, তারাই এখন নতুনভাবে তৈরি এসব বাগানের পরিচর্যা করছেন।
থাপাকর্ন বলেন, 'সবজি বাগানগুলো প্রতিবাদের মাধ্যম এবং এই কঠিন সময়ে আমার কর্মীদের খাওয়ানোর উপায়- উভয় ভূমিকাই পালন করছে।'
'বহু বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ২০১১ সালের ভয়াবহ বন্যা হওয়ার পরেও থাইল্যান্ডের ব্যবসা কখনো এত খারাপ অবস্থায় ছিল না, যতটা এখন,' যোগ করেন তিনি।
-
সূত্র: এপি