ফরাসি জাহাজের হিসাবের বইয়ে মিললো ১৮ শতকের এক তেলাপোকা!
ফরাসি দাসবাহী জাহাজের হিসাবের খাতা থেকে পাওয়া গেলো ১৮ শতকের এক তেলাপোকা। দুই শতকেরও বেশি সময় পর হিসাবের খাতাটির পৃষ্ঠা উল্টানো হয়েছিল, আর পৃষ্ঠার ভাঁজেই মিললো চমক! যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল আর্কাইভের এক বিস্ময়কর সংযোজন হয়ে ওঠা এই তেলাপোকার নাম 'পেরি'।
১৭৪৩ সালে লা রোশেল থেকে গিনি উপকূলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ক্রীতদাস আনা-নেওয়া করার এই জাহাজটি। আর সেই সাথে শুরু হয় তেলাপোকা পেরির ভ্রমণ। তবে জাহাজের নাবিকেরা পরবর্তীতে হাইতিতে পৌঁছে ভিন্ন একটি জাহাজে উঠে পড়েন, আর হিসাবের খাতাটিও তাদের সাথে নিয়ে যান। কিন্তু অনতিপরেই জাহাজটি ব্রিটিশরা কব্জা করে নেয় এবং প্লাইমাউথে পাঠিয়ে দেয়।
খাতার ভেতর থেকে মমিকৃত এই তেলাপোকাটি প্রথম আবিষ্কার করেন ন্যাশনাল আর্কাইভসের প্রাইজ পেপার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অলিভার ফিনেগান। প্রাইজ পেপারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- না পাঠানো চিঠি, লগবুক, জাহাজে থাকা নানাবিধ দলিল ও কাগজপত্র এবং বিলের কাগজ। ১৬৫২ থেকে ১৮১৭ সালের মধ্যে জব্দকৃত ৩৫,০০০ জাহাজের কাগজপত্র এর মধ্যে রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সংঘটিত ১৪টি যুদ্ধের ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়েও এসব কাগজ ন্যাশনাল আর্কাইভের হাতে পৌঁছেছেম একটি জাহাজকে বৈধ কারণে জব্দ করা হয়েছে কিনা, আদালতে তার প্রমাণ দিতে এসব দলিল প্রয়োজন হতো।
অলিভারের ভাষ্যেই শোনা যাক পেরির কথা- "আমি হিসাবের খাতাটা খুলতেই এই বিশাল পোকাটা দেখলাম। অপ্রত্যাশিত এই ঘটনায় প্রথমে আমার গা ঘিনঘিন করে উঠেছিল। ছবিতে যতটুকু দেখাচ্ছে, পোকাটা তার চেয়েও বড়। সম্ভবত ১৮ শতকের মাঝামাঝি থেকে এই খাতাগুলো আর খোলা হয়নি।
কীটতত্ত্ববিদদের সাথে কথা বলে অলিভার নিশ্চিত হয়েছেন যে 'পেরি' একটি আমেরিকান প্রজাতির তেলাপোকা (পেরিপ্লানেটা আমেরিকানা)। তবে এই প্রজাতির তেলাপোকা মূলত আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আগত। দাসবাহী জাহাজে করে এগুলো আমেরিকায় চলে আসে এবং যুক্তরাজ্যেও এগুলো পাওয়া যায় না বললেই চলে।
জাহাজের দলিলপত্র পরীক্ষা করে এটি স্পষ্ট যে তেলাপোকাটি পশ্চিম আফ্রিকার প্রথম জাহাজটিতেই উঠেছিল। অলিভার বলেন, এরকম অদ্ভুত একটা জিনিস তিনি আর কখনো দেখেননি! কারণ এই ধরনের তেলাপোকা আধুনিককালে যুক্তরাজ্যে পাওয়াই যায় না।
রেডিও কার্বন ডেটিং এর মাধ্যমে তেলাপোকাটির সঠিক বয়স নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ঐতিহাসিক প্রমাণাদি দেখে সহজেই বোঝা যায় যে তেলাপোকাটি বয়স অনেক বেশি।
ন্যাশনাল আর্কাইভসের সিনিয়র কনজারভেশন ম্যানেজার নাটালি ব্রাউন বলেন, "যখন এটা খাতার মধ্যে বন্ধ হয়ে আটকে যায়, তখন এক ধরনের মাইক্রোক্লাইমেট তৈরি করে যা তেলাপোকাটির দেহ সংরক্ষণে সাহায্য করে।"
আর এই উপাদানের কারণেই তারা তেলাপোকাটির লিঙ্গ বুঝতে পারেন। এটি একটি পুরুষ তেলাপোকা বলে এর নাম দেওয়া হয় পেরি।
এই মুহূর্তে পেরিকে একটি ঢাকনাযুক্ত বাক্সে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখন থেকে তার নিজস্ব রেফারেন্স নাম্বারও থাকবে বাক্সে এবং একটি ড্রয়ারে রাখা থাকবে। কেউ চাইলে ন্যাশনাল আর্কাইভসের বিশেষ অনুমতি নিয়ে তাকে পরীক্ষা করতে পারবেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান