আগস্ট ২০২২ থেকে মাঝারি আকারের জাহাজ ভিড়তে পারবে পায়রা বন্দরে
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলের রাবনাবাদ চ্যানেলে ১৪ মাসব্যাপী ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে বেলজিয়ান কোম্পানি জান দে নুল।
পায়রা সমুদ্র বন্দরে মাঝারি আকারের জাহাজ চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই আগামী জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এ ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে।
বেলজিয়ান কোম্পানিটি চ্যানেলের ৬৫ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করবে, ফলে বন্দরের ড্রাফট বা পানির গভীরতা হবে ১০.৫ মিটার। এছাড়া, জোয়ারের সময় ৫৫ হাজার টন ও ভাটার সময় বন্দরে ৪০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ভিড়তে পারবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান ড্রাফট বা পানির গভীরতা ৯.৫ মিটার। বন্দরটিতে ৩৫ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারে। কুতুবদিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এক লাখ টনের জাহাজ ভিড়তে পারে।
বহির্নোঙরের পরিবর্তে জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারলে বড় জাহাজে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ অনেকটাই কমে আসে।
এ মাসের শেষের দিকেই জান দে নুলের সঙ্গে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষর হবে। নব গঠিত বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে এ প্রকল্পের অর্থায়ন করবে সরকার।
কাজ শুরুর ১৪ মাস পর, আরও ২ বছর চ্যানেলে রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের কাজ করবে কোম্পানিটি।
ড্রেজিংয়ের কাজে সার্বিকভাবে জড়িত থাকবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। জান দে নুলের ড্রেজিংয়ের কাজ শেষে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ড্রেজার কিনবে বলে আশা করা হচ্ছে, ধীরে ধীরে বন্দর কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের কাজের দায়িত্ব নেবে।
বাংলাদেশের নদীগুলো হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রচুর পরিমাণ পলি জমা হয়। বাংলাদেশের বন্দরগুলোতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর ক্ষেত্রে এটি অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।
২০১৬ সাল থেকে পায়রা বন্দর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছে জান দে নুল। এর পর, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের আওতায় ১১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় কোম্পানিটিকে। শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি কোম্পানিটি।
এদিকে, সরকার প্রকল্পে সংশোধনী আনে, গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পকে সমুদ্র বন্দর প্রকল্পে পরিণত করা হয়। নিজস্ব অর্থায়নে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রকল্পের ব্যয় ৫৩ শতাংশ কমে আসে।
সরকারের সঙ্গে বেলজিয়ান কোম্পানিটির ইতোমধ্যে দুটি ড্রেজিংয়ের চুক্তি রয়েছে। রাবনাবাদ চ্যানেলেই ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রথম প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। ওই প্রকল্পের ফলে দুই ইউনিটের ১,৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়লাবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য ৬ দশমিক ৩ মিটারের ড্রাফট তৈরি করা হয়। অন্য চুক্তিটি ড্রাফটের রক্ষণাবেক্ষণের।
একজন কর্মকর্তা জানান, "বর্তমানে প্রতি মাসে ২০-৩০ হাজার টন কয়লাবাহী প্রায় ১০টি জাহাজ পায়রা বন্দরে আসে।" চীনের নির্মিত পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই কয়লা ব্যবহৃত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর এক নির্দেশনা অনুযায়ী, বন্দরটি ব্রেক-ইভেন পয়েন্টে (আয়-ব্যয়ের সাম্যাবস্থা) পৌঁছানোর পর এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের পর একে গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তর করা যেতে পারে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর মতে, বন্দরে আগামী বছর থেকে পুর্নোদ্দমে কাজ চালু হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে ব্রেক-ইভেন অর্জন করবে।
প্রাথমিকভাবে পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের অনুমিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১-১৫ বিলিয়ন ডলার। তিন ধাপে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
মেঘনা নদীর মোহনায় পটুয়াখালীর তেঁতুলিয়া নদীতে রাবনাবাদ চ্যানেলের অবস্থান। এটি চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দর থেকে যথাক্রমে ২৭০ কি.মি ও ৯০ কি.মি দূরে অবস্থিত। চ্যানেলের পাশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ব্যবহারযোগ্য জমি থাকায় এ অঞ্চলটি বাছাই করা হয়।
বর্ষার সময়ও এসব জমিগুলো ডুবে যায় না, এর সঙ্গে সড়ক ও নদী পথেরও সংযোগ রয়েছে।
ব্রিটিশ ফার্ম এইচআর ওয়ালিংফোর্ড অ্যান্ড কনসোর্টিয়ামের একটি প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা গবেষণা অনুযায়ী, পায়রা বন্দরে ৭ হাজার একর জমির প্রয়োজন হবে। এরমধ্যে বন্দর উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হবে ৬ হাজার একর, কয়লা টার্মিনালের জন্য ৫০০ একর এবং বন্দরের নির্মাণ কাজে ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের কাজে বাকি জমি ব্যবহৃত হবে।