একদিনে ট্রেজারি বিলে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা তুলল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে বাজার থেকে এক মাসের জন্য টাকা উত্তোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনই সংকটের মধ্যে হঠাৎ করে একদিনে সরকারের ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার বাংলাদেশে ব্যাংকের অকশন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সরকারের দুইটি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা তোলার কথা ছিল। একটি ছিল ৯১ দিন মেয়াদি, ২.৪০% সুদে উত্তোলন করার কথা ছিল ১৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া ৩৬৫ দিন মেয়াদে ৩.৪৯% সুদে তোলার কথা ছিল ১০০০ কোটি টাকা।
অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯১ দিন মেয়াদি বিলে একই সুদে উত্তোলন করেছে ৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। এছাড়া ৩৬৫ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে একই সুদে উত্তোলন করেছে ২৮৪০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, অকশন ক্যালেন্ডার যখন করা হয়েছিল তখন সরকারের টাকা উদ্বৃত্ত ছিল। হঠাৎ করে গত এক সপ্তাহে বড় বড় কিছু বিল পরিশোধ করায় সরকারের অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ প্রায়। তাই বেশি টাকা উত্তোলন করতে হয়েছে।
আগামী কয়েকদিনে আরও কিছু পেমেন্ট করতে হবে সরকারকে। একইসঙ্গে নতুন বছরের শুরুতে বেশি কিছু বিল পরিশোধ করতে হয় তাই টাকা উত্তোলন বেশি করেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে গত মাসে তুলে নিয়েছিল প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। আর সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে তুলে নেয়া হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। সব মিলেই ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার প্রবাহে টান পড়েছে। অনেক ব্যাংকই এখন এ সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে। এরই ফলে গত বুধবার থেকে এক মাসের জন্য বিলের মাধ্যমে টাকা না তোলার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
হঠাৎ করে অকশন ক্যালেন্ডারের লক্ষ্যমাত্রার বাহিরে গিয়ে বেশি টাকা তোলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রাষ্ট্রায়ত্ব একটি ব্যাংকের ট্রেজারি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেজারি বিলের অকশন ক্যালেন্ডারে টাকা তোলার কথা ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা অথচ টাকা তোলা হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি। আমাদের যদি আগে থেকে ইঙ্গিত দেয়া হতো তাহলে ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি থাকতো, তার কিছুই কেন্দ্রীয় ব্যাংক করেনি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রাহকের আমানতের সুদ মূল্যস্ফীতির কম যেন না হয় এমন নির্দেশনা দিলেও তিন মাসের ট্রেজারি বিলের সুদ দিচ্ছে চার শতাংশের কম। এটা আরও বাড়ানো দরকার।
উল্লেখ্য, মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত অর্থ তুলে নেয়। সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক বিল, আমানতের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার (সিআরআর) বাড়িয়ে দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়।
করোনাকালে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য থাকলেও কোভিড প্রভাব অনেকটা কমে আসায় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। বিনিয়োগ বাড়ায় ব্যাংকিং খাতে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। গত একমাসে ব্যাংকগুলোতে তারল্য চাহিদা দেখা দিয়েছে। এরই ফলে কল মানি মার্কেটে নভেম্বরে গত ১৪ মাসের তুলনায় রেট ছিল সর্বোচ্চ।