কালো টাকা সাদা: অর্থমন্ত্রীর ‘ইঙ্গিতে’ টিআইবির ক্ষোভ
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাড়ানোর ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর 'ইঙ্গিতে' বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
অর্থমন্ত্রীর বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনের একদিন পর শনিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ ক্ষোভের কথা জানায় দুর্নীতিবিরোধী এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয়ের মোড়কে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার যে অনৈতিক সুযোগ রাখা হয়েছিলো, প্রস্তাবিত বাজেটে সেটি না বাড়ানোয় সৎকরদাতাদের মধ্যে যে সাময়িক স্বস্তি মিলেছিলো, তা একদিনের ব্যবধানে উৎকন্ঠায় পরিণত হয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর 'এক মাস দেখে সিদ্ধান্ত' নেওয়ার ঘোষণায় গভীর হতাশা, বিস্ময় ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। অর্থমন্ত্রী হঠকারী এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন এবং ৩০ জুন ২০২১ এর পর দুর্নীতিসহায়ক, বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক সুবিধাটি আর না বাড়িয়ে দুর্নীতিবাজদের একটি কঠোর বার্তা দেবেন বলেও আশা টিআইবির।"
বাজেটে কালো টাকা সাদা করা নিয়ে কোনো ঘোষণা না থাকাকে টিআইবি সরকারের বোধেদয় হয়েছে মনে করেছিলো এবং সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছিলো উল্লেখ করে আজ এক বিবৃতিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, বাজেট অর্থমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দিকনির্দেশনায় তৈরি একটি সমন্বিত চিন্তার আর্থিক দলিল। কিন্তু সেটি সংসদে উপস্থাপনের পরদিনই তারই একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সংশয় এবং বাস্তবে ইউ-টার্ন সত্যিই অবাক করার মতো। তারচেয়েও হতাশার বিষয় হচ্ছে ন্যায় ও ন্যায্যতার নিরিখে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চলতি অর্থবছরের পর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মলেনে অর্থমন্ত্রী এমন বললেও কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় বা চাপে তাতে অটল থাকতে পারছেন না? তা পরিস্কার করতে পারেননি।"
ইতোপূর্বে 'যতদিন অপ্রদর্শিত আয়, ততদিন ঘোষণার সুযোগ' মর্মে দেওয়া বক্তব্য তথ্য উপাত্ত দ্বারা সমর্থিত ছিলো না বলে অর্থমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা সংবাদ সম্মেলনে হাজির করেছেন সেটি তাঁর মতো দায়িত্বশীল ব্যাক্তির কাছ থেকে সত্যিই আশাপ্রদ নয় জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "চলতি অর্থবছরের প্রথম দশমাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বৈধ করার ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর একটি প্রচেষ্টা শুরু থেকেই ছিলো, শঙ্কা হচ্ছে তিনি অন্যায় এই সুবিধার পক্ষে সেই ঢালটি এখন ব্যবহার করতে চাইছেন যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অথচ এর মাধ্যমে সত্যিকারভাবে সরকার কতোটা রাজস্ব ক্ষতির স্বীকার হলো সেটি কোনোভাবেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। যেটিকে সৎ ও বৈধ পন্থায় উপার্জনকারী করদাতাদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করার মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় খেলাপির সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পাঁয়তারা বলে মনে করা মোটেই বাহুল্য হবে না।"
কোনো কতৃপক্ষের প্রশ্ন ব্যতিরেকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সরকারের 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার' অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধই করছে না বরং দুর্নীতিবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে জানিয়ে ড. জামান বলেন, "আয়কর অধ্যাদেশের আইনি মারপ্যাঁচে থাকা অপ্রদর্শিত আয়ের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার অন্যান্য সুযোগও বাতিল করার এখনই সময়। অপ্রদর্শিত অর্থ আর কালো টাকার মধ্যে পার্থক্য যে অতীব ক্ষীণ তা কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়. কোনো-না-কোনো কৌশলে দুর্নীতিবাজদের তোষণের নীতি থেকে বেরিয়ে এসে সরকার দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে সাংবিধানিক অঙ্গীকার রক্ষায় এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা। সবধরনের দ্বিধাদ্বন্ধ এবং স্বার্থান্বেষী অনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ প্রদান না করতে সরকারের প্রতি আবারো উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় যত দ্রুত হবে, দেশের অর্থনীতির কাক্সিক্ষত সুশাসনও ততো ত্বরান্বিত হবে।"