প্রোমোশন ব্যয় কিছুটা বাড়াতে পারবে কোম্পানিগুলো
আগামী বাজেটে প্রমোশনাল ব্যয়ের সীমা ০.৫ শতাংশের পরিবর্তে টার্নওভারের ১ শতাংশ করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে, নতুন উদ্যোগক্তাদের উৎসাহিত করতে এবং এ খাতের কোম্পানিগুলোকে কিছুটা ছাড় দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
মুনাফা কম হলেও পণ্যের বিক্রি বাড়াতে প্রমোশন খাতে ব্যয় করতে হয় এমন কোম্পানির জন্য বড় সমস্যা এ আইনটি, বিশেষ করে নতুন ও ছোট কোম্পানিগুলো এ সমস্যায় বেশি ভুগছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২০-২১ হিসাব বছরে এফএমসিজি খাতের একটি কোম্পানির ১০০ কোটি টাকার টার্নওভারের বিপরীতে মুনাফা করেছে ২ কোটি টাকা।
করপোরেট করের হিসাব অনুযায়ী কোম্পানিটির আয়করের হার ৩২.৫ শতাংশ, প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু টার্নওভারের ৬ শতাংশ প্রমোশনাল খাতে ব্যয় করে বিপাকে পড়েছে কোম্পানিটি।
এনবিআরের আয়কর অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী টার্নওভারের ০.৫ শতাংশের বেশি প্রমোশনাল ব্যয় হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে অতিরিক্ত ১.৭৯ কোটি টাকাসহ মোট ২.৪৪ কোটি টাকা কর দিতে হবে ওই কোম্পানিকে। অর্থাৎ মুনাফার চেয়ে বেশি আয়কর দিতে হবে তাদের।
এই ছাড়ে কিছুটা স্বত্তি আসলেও দেশের এফএমসিজে, টেলিকম, তৈরি পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য তা যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন এফআইসিসিআইয়ের মহা সচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, "পণ্যের প্রচারের জন্য এফএমজিসে খাতের কোম্পানিগুলোকে প্রমোশনাল খাতে টার্নওভারের ৫-৬ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিকে আরও বেশি করেতে হয়। এ সীমা ১ শতাংশ করা হলেও বাংলাদেশে ব্যবসার ব্যয় বেশি থাকবে।"
গত বাজেটেই প্রথমবারের মতো কোম্পানির প্রমোশনাল ব্যয়ের ক্ষেত্রে মোট টার্নওভারের ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত সীমা নির্ধারণ করে দেয় এনবিআর। এর অতিরিক্ত ব্যয়ে জরিমানা হিসাবে করপোরেট করের সমপরিমাণ হারে কর কাটা হয়।
বর্তমানে সাধারণ কোম্পানির জন্য ৩২.৫ শতাংশ এবং ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত করপোরেট কর দিতে হয়। করপোরেট কর কোম্পানির মুনাফার ওপর আদায় হলেও জরিমানা করের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, করোনাকালীন বাজেট হিসাবে বেশ কিছু খাতে ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসাবে কোম্পানির প্রমোশনাল ব্যয় ও যাতায়াত ব্যয়ের ওপর ছাড় দেওয়া হতে পারে। ট্রাভেল ব্যয়ের বিদ্যমান হার ০.৫ শতাংশের পরিবর্তে ০.৭৫ শতাংশ করা হতে পারে।
স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কো'র প্রতিষ্ঠাকালীন অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, কোম্পানিগুলোর ট্যুর ও ট্রাভেলস ব্যয় হয় সাধারণত দেশের বাইরে মার্কেট খোজা ও বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগের উদ্দেশ্য। প্রমোশনাল ব্যয়ও অনেকটা একই রকম। এ ক্ষেত্রে রাশ টেনে ধরলে প্রতিযোগীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
এ কারণেই এ খাতে ছাড় দিয়ে মূল্য নির্ধারণ শক্তিশালীকরণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কোম্পানির ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনা যায় বলে মনে করেন তিনি।
এনবিআরের আয়কর বিভাগরে একজন কর্মকর্তা বলছেন, অতিরিক্ত ব্যয়ের রাশ টানা ও অর্থপাচার রোধে কোম্পানির প্রমোশনাল ব্যয়ের সীমা ০.৫ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তবে এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই সীমা দ্বিগুণ করা হচ্ছে।
২০২০ সালের বাজেটেই প্রথমবারের মতো কোম্পানির প্রমোশনাল ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে এনবিআর।
প্রমোশনাল ব্যয় কমিয়ে দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের কোম্পানিগুলো। সম্প্রতি এক গবেষণায় বিআইডিএস দেখিয়েছে দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো টার্নওভারের প্রায় ২৯ শতাংশ ব্যয় করেন বিপণন বাবদ। এর মধ্যে বড় অংশ প্রমোশনাল ব্যয়। ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে নানা উপঢৌকন এবং ঔষধের স্যাম্পল বাবদ এ ব্যয় হয়। নতুন আইন হলে এ ব্যয়ের লাগাম টানবে।
ওপসোনিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রউফ খান বলেন, ঔষধ শিল্পের অগ্রগতি থামিয়ে দিতে এ আইনটি করা হয়েছে। নমুনা বাবদ আমাদের বিপুল ব্যয় করতে হয়। এ আইনের কারণে তা পারছে না অনেক কোম্পানি।
০.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ না করে তা এই সীমা পুরোপুরি তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
ফার্মাসিউটিক্যালসের মতোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এফএমসিজে মার্কেট। এ খাতের কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন এবং ব্র্যান্ডিং বাবদ টার্নওভারের ৫-৬ শতাংশ পর্যন্ত খরচ হয়। বেশি মুনাফা করা কোম্পানিগুলো তা পুষিয়ে নিতে পারলেও বিপাকে পড়তে হয় ছোট কোম্পানিগুলোকে।
একটি বহুজাতিক এফএমসিজে কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এফএমসিজে ব্যবসার ধরনই হলো বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি। এর জন্য ১ শতাংশ সীমাও গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের প্রতিযোগী কেনো দেশে এ আইন নেই। এর ফলে বাজার সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হয়।
শুধু ফার্মাসিউটিক্যাল কিংবা এমএফসিজে নয় সব কোম্পানিই এর ভুক্তভোগী বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
১ শতাংশ করা হলে কিছুটা স্বত্তি ফিরবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যয়ের সীমা তুলে দেওয়া উচিত।
দেশে নিবন্ধিত সব কোম্পানিকে বছর শেষে রিটার্ন জমা দিতে হয় এনবিআরের কাছে। রিটার্নে প্রশাসনিক ও ব্যবসায়ীক ব্যয়সহ পরিচালন ব্যয়ের পূর্ণ হিসাব দেয় কোম্পানি। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত কোম্পানি ১.৭৯ লাখ। এসব কোম্পানি থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা কর পেয়েছে সরকার।