ফেব্রুয়ারিতে বৈদেশিক বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত কমেছে ৬৫২ মিলিয়ন ডলার
আমদানি ব্যয় বাড়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেনের চলতি হিসাবে ঘাটতি কমতে শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে উদ্বৃত্ত কমেছে ৬৫২ মিলিয়ন ডলার।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বিওপি) থেকে এসব তথ্য প্রকাশ পাওয়া গেছে।
এতে দেখা যায়, জুলাই-জানুয়ারি এই সাত মাসে কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সের উদ্বৃত্ত ছিল ২.২১ বিলিয়ন ডলার, জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার।
অবশ্য গেল অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সের উদ্বৃত্ত নয় বরং ঘাটতি ছিল ২.১১ বিলিয়ন ডলার। ওই সময় করোনার প্রকোপ না থাকায় আমদানি স্বাভাবিক থাকায় এ বাবদ ব্যয় অনেক বেশি ছিল, যার প্রভাবে ঘাটতিও ছিল।
তবে গেল অর্থবছরের শেষের দিকে এসে কোভিডের প্রভাবে আমদানি ব্যাহত হওয়া ও পরবর্তীতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে যাওয়া এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছিল। যার প্রভাবে কারেন্ট একাউন্ট ব্যালেন্সের ঘাটতি না হয়ে উদ্বৃত্ত হয়ে যায়।
অবশ্য গেল জানুয়ারি থেকে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়ানোয় আমদানি বাড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারিতেও তা অব্যাহত থাকে। ফলে গেল অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি এই আট মাসে আমদানি ব্যয় প্রায় দুই শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭.০৭ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রপ্তানি আয় গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১.২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৫.২৭ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি ব্যয় বাড়ার ক্ষেত্রে চাল আমদানি বড় ভূমিকা রেখেছে। সরকার চালের মজুদ বাড়ানোর লক্ষ্যে আমদানি বাড়ানোয় জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এ বাবদ ব্যয় অনেক বেড়েছে। আট মাসে চাল আমদানি বাবদ ব্যয় ৩৭৭ মিলিয়ন ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার।
গেল আট মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ভোগ্যপণ্য আমদানি বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করায় দেশের বাজারেও এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এক্ষেত্রে আসছে রমজানে পণ্য সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোকে এলসি মার্জিন ন্যূনতম রাখার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে আমদানিকারকের হাতে অর্থের সংকট থাকলেও ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ সুবিধা নিয়ে পণ্য আমদানি করতে পারবে। এতে সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না।
এদিকে জুলাই-ফেব্রুয়ারি এই আট মাসে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ। তবে বিনিয়োগের প্রধান অনুষঙ্গ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যয় কমেছে ২১ শতাংশ। অর্থাৎ এখনো স্বাভাবিক বিনিয়োগে ফিরতে পারছেন না উদ্যোক্তারা।
বিদেশি বিনিয়োগেও হতাশা তীব্র। আট মাসে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় নিট বিদেশি বিনিয়োগ ৩১ শতাংশের বেশি কমে দাঁড়িয়েছে ৬০৬ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে এদিকে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ কমছেই। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে তারা হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে ২০৪ মিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছেন। অন্যদিকে একই সময়ে অনিবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) দেশে বিনিয়োগ বাড়েনি।
তবে আশার খবর হচ্ছে আমদানি বাড়ার সাথে সাথে প্রবাসীদের পাঠানো উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত আছে। জুলাই-ফেব্রুয়ারি এই আট মাসে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স আয় ৩৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭.০৫ বিলিয়ন ডলারে।
এই উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ ও কোভিড পূর্ববর্তী সময়ের মতো আমদানির ব্যয়ের চাপ না থাকায় সার্বিক ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব পেমেন্ট (বিওপি) জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৮৮ বিলিয়ন ডলার। যা গেল অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ২১৪ মিলিয়ন ডলার।
বিওপি বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও বাড়ছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এর মজুদ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিমাণ মজুদ দিয়ে বাংলাদেশ ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা রাখে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে বলা হচ্ছে।
এদিকে দেশের ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকতে হয়। ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ থাকলে ওই দেশ শক্তিশালী অবস্থানে থাকে।
হাতে অতিরিক্ত রিজার্ভ থাকায় এর থেকে প্রাথমিকভাবে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল ১৫ মার্চ সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছে। এই অর্থ পায়রা সমুদ্র বন্দরের উন্নয়নে ব্যয় হবে।