মহামারি পরবর্তী বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বিডা
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মূল কাজ হলো 'ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন'। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরে এ কাজটি গুরুত্ব দিয়ে করতে চেষ্টা করা হয়েছে। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করছে বিডা; ব্যবসা সহজীকরণে চালু করেছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস)।
গত এক বছরে করোনার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ তেমন না আসলেও তার আগের চার বছরে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হয়েছে।
এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম। বিডার পাঁচ বছর পূর্তিতে তার সঙ্গে কথা হয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) জন্য যে ওয়ান স্টপ সেবা (ওএসএস) চালু করা হয়েছে তা ইতিবাচক হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। পাশাপাশি কিছু সংস্থার অসহযোগিতার কারণে ওএসএস বাস্তবায়ন কঠিন হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সিরাজুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে দেশ-বিদেশের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নভেম্বরে দেশে আয়োজন করা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট। এছাড়া এ বছর লন্ডন রোড শো করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দুবাই এক্সপোতেও যোগ দিবে বিডা। এর মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহ, শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদানসহ অব্যবহৃত সরকারি জমি অধিকতর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারিকরণ কমিশনকে একীভূত করে বিডা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, শুরু থেকেই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের খুব সহজে অতি দ্রুত আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগ সেবা, সর্বোচ্চ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে কাজ করছে বিডা।
তিনি বলেন, "বিডার মূল দায়িত্ব হলো ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন। ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মার্কেটিং। মার্কেটিং না করতে পারলে বিনিয়োগ আনা যায় না। আর মার্কেটিং করতে হলে মানুষের কাছে যেতে হয় অথবা যাদের কাছে তুলে ধরবেন তাদেরকে ডেকে আনতে হয়। গত দেড় বছরে করোনার কারণে এখানে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এর ফলে বিনিয়োগের এই ধরনে স্থবিরতা আছে"।
"তবে আমরা অনলাইনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে যাতে বিনিয়োগ নিয়ে আসেন, তাদের সামনে সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরছে বিডা।
আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটা ক্ষেত্র তৈরী করছি । আমরা দেশি - বিদেশি বিনিয়োগকারীর সুবিধা অসুবিধা জানাচ্ছি। কিন্তু যতক্ষণ বিনিয়োগকারী সরাসরি আসতে পারছে না ততক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারছে না। করোনা চলে গেলে তারা এসে যেন তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারে, আমরা সেই ক্ষেত্র তৈরী করে রাখছি। করোনা শেষ হলে আমরা মার্কেটিংটা আরও দ্রুত করতে চাই"।
ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট
দেশ-বিদেশের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আগামী ২৮-২৯ নভেম্বর রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে হবে ইনভেস্টমেন্ট সামিট।
বিডার চেয়ারম্যান মনে করেন, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এটি একটি বড় উদ্যোগ। যারা নিজেরা আসতে পারবে না তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, "আমরা প্রায় ১৫টি দেশ টার্গেট করছি। যে সব দেশ থেকে বেশি বিনিয়োগ পাই, তাদের পাশাপাশি পটেনশিয়াল বিনিয়োগকারীদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছি"।
ইজ অব ডুইং বিজনেস
সিরাজুল ইসলাম জানান, ইজ অব ডুইং বিজনেসের সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে বিডা। বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে অনেকদিন ধরে ১৭৩ ও ১৭৭ এর ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছিল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে প্রথম বড় ধরনের অগ্রগতি হয়- ৮ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬ থেকে ১৬৮তে উন্নীত হয়। গত বছর কোন র্যাংকিং প্রকাশ হয় নি। ২০২১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কে নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বিডা। এটা হলে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
ওয়ান স্টপ সার্ভিস
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সেবা অনলাইনে প্রদানের লক্ষ্যে বিডা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সহযোগিতায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) পোর্টাল চালু করেছে। ২০১৯ সালে এ পোর্টাল চালু হয়।
ইতোমধ্যেই বিনিয়োগকারীকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) এর মাধ্যমে ৫১টি সেবা অনলাইনে দিচ্ছে বিডা।
প্রথমে সরকারি ৩৫টি সংস্থা থেকে ১৫৪টি সেবাকে ওএসএস কার্যক্রমের মাধ্যমে সেবা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন বেসরকারি সেবাদানকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছে বিডা। এতে সেবাদানকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
ইতোমধ্যে বিডা ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক করেছে; তার মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৫১টি সেবা ওএসএস এর মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। দুই সপ্তাহে মধ্যে আরও ৫টি সেবা এ তালিকায় যুক্ত হবে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগকারীরা ঘরে বসে ওএসএস এর মাধ্যমে সার্ভিস নিতে পারে। বিডা ১৭টি সার্ভিস পুরোপুরি অনলাইনে দিচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে না এসেও যেন অনলাইনের মাধ্যমেই ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারে সেটা নিয়েও বিডা কাজ করছে।
তবে সিরাজুল ইসলামের পর্যবেক্ষণ হলো, "অনেক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে- তারা যতটা উৎসাহ নিয়ে আমাদের সঙ্গে চুক্তি করে তত উৎসাহ নিয়ে সেবা দেয়ার ব্যাপারে কাজ করে না। এ বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিনিয়োগকারীরা যেন দ্রুত সেবা পেতে পারে সেটা তদারকি করার জন্য অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী সময় দিলেই এ কমিটির সভা হবে। আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সব প্রতিষ্ঠানেই যেন দ্রুত সেবা দেয় সে বিষয়ে আলোচনা হবে"।
বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়ে অনলাইনে ডাটাবেজ তৈরী হচ্ছে
দেশের সকল বিনিয়োগ প্রকল্পের ডাটাবেজ তৈরী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
"যে প্রকল্পগুলো আমাদের সঙ্গে আছে সেগুলো আমরা নিবন্ধন করে নিবো। ই-মনিটরিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা হয়ে গেলে খুব সহজেই আমরা জানতে পারবো প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে", বলেন সিরাজুল ইসলাম।