মহামারির মধ্যেও সর্বোচ্চ মুনাফা লাভ করেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বছরের সর্বোচ্চ পরিমাণ মুনাফা করেছে বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল)।
২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ২৬ দশমিক৬৮ শতাংশ বেশি।
গত ২০ বছরের আর্থিক হিসাব বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এটি ডাচ-বাংলার সর্বোচ্চ মুনাফা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, 'ব্যাংকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফায় রেকর্ড। এর আগে এত বেশি মুনাফা হয়নি'।
"ব্যাংকের ভিত্তি মজবুত থাকায় করোনা ধাক্কা সামলিয়ে ভালো মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকের মুনাফা বাড়ছে। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে মহামারির সময়ও ব্যবসার স্বাভাবিক ধারা অব্যহত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।"
আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে, ডাচ-বাংলা ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই লভ্যাংশের ১৫ শতাংশ নগদ আর ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ। ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ নগদ আর ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল ব্যাংকটি।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০১ সালে।
১৯৯৫ সালের ৪ জুলাই ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে ; সে বছরেরই ২৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স পায়।
তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ডাচ-বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশের স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত প্রথম ব্যাংক।
দ্রুতগতির অটোমেশন এবং আধুনিক ব্যাংকিং পরিষেবার জন্য ২০০২ সালে এর ইলেক্ট্রনিক-ব্যাংকিং বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
পুরো অটোমেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ২০০৩ সালে যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে কাগুজের মুদ্রার বাইরেও 'প্লাস্টিকের মুদ্রা' জনপ্রিয় করে তোলে।
বাংলাদেশে এটিএম নেটওয়ার্কের শীর্ষে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক; এ প্রক্রিয়াটি ভোক্তাদের ফী এবং ব্যয় শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস করে।
ঋণ বিতরণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়ন ও মহামারির সময় ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ কমলেও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মুনাফা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ঋণ শ্রেণীকরণ স্থগিত রাখা মুনাফায় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। কারণ খেলাপী ঋণের বিপরীতে ব্যাংককে প্রভিশন রাখতে হয়, এবার খেলাপী না বাড়ায় প্রভিশন কম রাখতে হয়েছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডাচ-বাংলা ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৩০.৬৪ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৫৯২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ১১০৭ কোটি টাকা।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১০ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ২৬.৭৪% বেশি।
নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ৩২২৫.৬৬ কোটি টাকা আর শেয়ার প্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু ৫৮.৬৫ টাকা।
২০১৯ সালে ব্যাংকটির নীট মুনাফা ছিল ৪৩৪.১৪ কোটি টাকা আর ইপিএস ৭.৮৯ টাকা। নেট অ্যাসেট ভ্যালু ও শেয়ার প্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু ছিল যথাক্রমে ২৭৪৪.৩৩ কোটি টাকা ও ৪৯.৯০ টাকা।
কোম্পানী জানিয়েছে, ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে ২৬ এপ্রিল বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। লভ্যাংশ বিতরণে শেয়ারহোল্ডার নির্বাচনে রেকর্ড ডেট ২৮ মার্চ।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, নেদারল্যান্ডস ডেভলপমেন্ট ফিন্যান্স কোম্পানির একটি যৌথ উদ্যোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
যদিও নেদারল্যান্ডস ফিন্যান্স ২০১৯ সালে তার সমস্ত শেয়ার বিক্রি করে দেয়।
কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন পাঁচশ কোটি টাকা।
২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত, মোট ৫৫০,০০০,০০০ শেয়ারের ভেতর স্পনসর এবং ডিরেক্টরদের অংশে রয়েছে ৮৬.৯৯ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৫.০৪ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ০.০১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশে রয়েছে ৭.৯৬ শতাংশ শেয়ার।