হাজার কোটি টাকার প্লট ও ফ্ল্যাট কিনে প্রতারিত ক্রেতারা ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে
নিজের একটি ফ্ল্যাট থাকবে—এই স্বপ্ন হাজারো মানুষের। কিন্তু ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে টাকা খুইয়ে, জাল কাগজপত্রের খপ্পরে পড়ে অসংখ্য মানুষের জন্য সেই স্বপ্ন পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে। প্রতিকারের জন্য আইনের গোলকধাঁধায় ঘুরে ঘুরে হয়রান হচ্ছেন তারা। কিছু দুর্বৃত্ত রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, চটকদার বিজ্ঞাপন ও কথায় আকৃষ্ট হয়ে প্রতারিত হয়েছেন তারা।
রিয়েল এস্টেট ও হাউজিং কোম্পানিগুলোর লোভনীয় অফারে প্লট ও ফ্ল্যাট কেনার পর প্রতারিত হয়ে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ২০ হাজারের বেশি ক্রেতা। এই কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাদের প্রতারিত করেছে। বছরের পর বছর ঘুরে, এমনকি মামলা করেও টাকা আদায় করতে পারছেন না প্রতারিত ক্রেতারা।
দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের অনুসন্ধানে জানা যায়, এরকম প্লট কিনে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগে প্রায় ৯ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে ঢাকার বিভিন্ন আদালতে। এসব মামলার বিপরীতে ক্রেতাদের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে।
এছাড়াও ফ্ল্যাট কেনার পর প্রতারিত হওয়ার মামলা আছে ৩ হাজার। যার বিপরীতে আটকে আছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
প্লট বিক্রির নামে প্রতারণা
রাজধানীর অদূরে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাছাকাছি ওয়েলকেয়ার সিটি আবাসন প্রকল্পে ২০১৬ সালে দুই কোটি টাকা দিয়ে ৫ কাঠার একটি প্লট কিনেছিলেন ব্যবসায়ী আশরাফুল হাসান রাহাত।
ওই বছরের শেষ নাগাদ আবাসিক প্রকল্পের দুই হাজার ক্রেতার কাছে প্লটগুলো হস্তান্তরের কথা থাকলেও তা আর হয়নি।
এর কারণ, জলাশয়, আবাদি জমি ও ফ্লাড ফ্লো-জোন দখল করে ৫০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা এই আবাসিক প্রকল্পটির জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) সরকারের সংশ্লিষ্টদের কোনো অনুমোদন ছিল না। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে রাজউকের দুইজন মেজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আবাসিক প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর ফলে বিপাকে পড়েন আশরাফুলসহ দুই হাজার প্লট ক্রেতা। আবাসিক প্রকল্পটির কর্তাদের কাছে টাকা ফেরত চেয়ে দিনের পর দিন ঘুরেও কাজ হয়নি। এছাড়া রাজউক, বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন ও রিহ্যাবের কাছে অভিযোগ করলেও সেগুলোর কোনো সুরাহা হয়নি।
আর কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত গত বছরের মে মাসে তারা ঢাকার আদালতে মামলা করেছেন।
আশরাফুল হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'দুই হাজার প্লটের ক্রেতারা পৃথকভাবে ৪০ টি প্রতারণার মামলা করেছে। এসব মামলায় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে।'
তিনি বলেন, এসব মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন ওয়েলকেয়ার সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। এখন পর্যন্ত মামলার অভিযোগ গঠন হয়নি।
এসব মামলার তদন্তের দায়িত্ব রাজধানীর খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি বলে জানান আশরাফুল।
হতাশ আশরাফুল জানালেন, 'প্রতি মাসে তারিখ পড়ে, আর সে তারিখে আমরা আদালতে হাজির হই। নতুন করে তারিখ পড়ে পুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য। এখন আমরা চরম বেকায়দায় আছি।'
আরেক প্লট ক্রেতা গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাসিন্দা সৈয়দ মুজিবর রহমান বলেন, 'দুবাইয়ে শ্রমিক হিসেবে আট বছর কাজ করে সকল উপার্জন জমা করে দুই কোটি টাকায় প্লটটি কিনেছিলাম। এই প্লট কেনার আগে প্রকল্পের কর্মকর্তারা রাজউকসহ ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ভূয়া অনুমোদন দেখিয়ে আমাদের লোভে ফেলেছিল। অনেক সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এখানে প্লট কিনেছেন, তাই আমি আর কোনো কিছু যাচাই করার চিন্তা করিনি।'
তিনি বলেন, 'পরিকল্পনা ছিল এই প্লটি কোনো ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে যে কয়টি ফ্ল্যাট পাওয়া যায়, সেগুলো থেকে আসা ভাড়ার টাকায় সংসার পরিচালনা করব। জীবনের সকল উপার্জন এখানে হারিয়েছি। এখন পথে বসে গেছি। ছোট একটি ব্যবসা করে কোনো রকমে জীবন পার করছি। এই টাকা ফেরত পাব কি না, তার কোনো কূল-কিনারা নেই।'
টিবিএসের পক্ষ থেকে ওয়েলকেয়ার গ্রুপের এমডি মোস্তাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে কেয়কবার কল করা হলেও, তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসএমএস করা হলেও উত্তর দেননি।
তবে মোস্তাফিজুর রহমানে আইনজীবী মোহাম্মদ জসীম টিবিএসের কাছে দাবি করেছেন, এসব মামলার কোনো 'ভিত্তি নেই'।
তিনি বলেন, 'পার্শ্ববর্তী একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের প্রভাবের কারণে এই প্রকল্পটি বন্ধ হয়েছে। ওয়েলকেয়ার সিটির এমডিসহ সংশ্লিষ্টরা সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে এখনও আলাপ-আলোচনা করছে। এটি সমাধান হয়ে যাবে।'
খিলক্ষেত থানার ওসি মুন্সী ছাব্বীর আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'মামলাগুলোর তদন্ত এখনো চলছে। আগের যে দুইজন কর্মকর্তা এই মামলাগুলোর তদন্ত করছিলেন, তারা অন্য থানায় বদলি হওয়ায় নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছেন। বিষয়টি বড় হওয়ায় তদন্ত সম্পন্ন করতেও সময় বেশি প্রয়োজন।'
ওয়েলকেয়ার সিটির প্লট কিনে প্রতারিত গ্রাহকদের সনন্বয়ক সাবেক অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন বলেন, 'প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনেক প্রভাবশালী ও টাকার মালিক হওয়ায় তিনি নানাভাবে তদন্ত বিলম্ব করাচ্ছেন। এছাড়াও বড় মাপের আইনজীবী নিয়োগ করে এবং প্রভাব খাটিয়ে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার পর নিম্ন আদালতে গিয়ে সেই জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন।'
নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, রাজধানীতে যেকোনো আবাসিক প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য হাউজিং কোম্পানিগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে রাজউকের অনুমোদন নিতে হয়।
রাজউকের আওতাধীন যেকোনো অবৈধ আবাসন প্রকল্প বন্ধ করা রাজউকের দায়িত্ব। তিনি বলেন, রাজউক এ ব্যাপারে তেমন কোনো কাজই করে না।
তিনি বলেন, 'প্রতিষ্ঠানটি তখনই কোনো বেআইনি আবাসন প্রকল্প বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়, যখন সেটি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা কর্মকর্তার "চাহিদা" পূরণ করতে পারে না।'
তবে স্থপতি ইকবাল হাবীবের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী। তিনি বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রাজউক কর্তৃপক্ষ সবসময়ই গুরুত্বের সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে।
তিনি দাবি করেন, এখন যেসব বেসরকারি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে রাজধানীর আশপাশের এলাকায়, তার বেশিরভাগই রাজউকের অনুমোদন নেয়নি। তিনি বলেন, 'রাজউক ২০১০ সাল থেকে এরকম ৫৪টি বেসরকারি আবাসিক প্রকল্প বন্ধ করেছে। এসব প্রকল্পের প্লট ক্রেতাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য রাজউক থেকে নির্দেশনা আছে।'
তবে এ ধরনের অবৈধ প্রকল্প বন্ধ করার দায়িত্ব শুধু রাজউকের নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এরকম অবৈধ প্রকল্প বন্ধ করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের।'
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ও ২৮টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্লট-সংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা প্রায় ৬ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় গ্রাহকদের ১০ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে।
ঢাকা জেলা দায়রা আদালতের নাজির আজিম উদ্দিন জানান, জেলা আদালত ও আটটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরও তিন হাজার মামলা চলছে এবং এসব মামলার বিপরীতে গ্রাহকদের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে।
ফ্ল্যাট ব্যবসায় প্রতারণা
রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় আউটার সার্কুলার রোডের ৭৩ নম্বর বাড়িটি ২০১৫ সালে আনোয়ারা হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর করেন জমিটির মালিক খান এ মজলিস নাসিম।
ওই বাড়িটিতে মোট ২৬টি ফ্ল্যাট করার ছিল। জমির মালিকের জন্য বরাদ্দ হওয়া ৮টি ফ্ল্যাট ছাড়া বাকি ১৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণের আগেই অগ্রিম বিক্রি করে দেন আনোয়ারা হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান হাবীব। প্রতিটি ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয় আড়াই কোটি টাকা দরে।
২০১৫ সালের শেষ দিকে বাড়িটি নির্মাণের কাজ শুরু করে তিনতলা পর্যন্ত ইটের দেওয়াল গড়ে ওঠে। কিন্তু ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে হঠাৎ করেই বাড়িটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
জমিটির মালিক খান এ মজলিস নাসিম বলেন, 'এই ১৮টি ফ্ল্যাটের প্রায় ৪৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকার কাজ হয়েছিল। এছাড়াও এই জমি এবং ১৮ টি ফ্ল্যাটের ওপর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে আরও ১১ কোটি ঋণ নিয়ে যুক্ত রাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটির এমডি আহসান হাবীব।'
দেওয়ান মুরাদ হোসেন নামে একজন ফ্ল্যাট ক্রেতা বলেন, 'প্রতিষ্ঠানটির এমডি বিদেশ পালিয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। এখন জমির মালিক বলছেন, সেখানে তিনিই বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করে নিজের জন্য পুরো বাড়িই নিয়ে নিবেন।'
তিনি বলেন, 'থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও আনোয়ারা হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেটের কাউকে খুঁজে না পওয়ায় আমরা আর মামলা করতে পারিনি।
'ঢাকার আদালতে মামলা দায়ের করা হলেও সেটি ফ্ল্যাট-সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য সালিশি ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ, বাড়ির জন্য বরাদ্দ হওয়া জমিটির মালিকও প্রতারিত। এখন পর্যন্ত আরবিট্রেশন কাউন্সিল কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। ফলে এখনও ঘুরছি, কিন্তু কিছু করতে পারছি না।'
রাজধানীর মানিকনগরে নাজরানা হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেটের একটি প্রকল্পের ১৪টি ফ্ল্যাটের প্রতিটি ফ্ল্যাট প্রতারণা করে ৩১ ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ওই ভবনের একটি ফ্লাট ৮০ লাখ টাকায় কিনেছিলেন ব্যবসায়ী ফজলুল হক। তিনি বলেন, 'প্রথমে আমার কাছে প্লাট বিক্রয় করেছে। এরকম ১৪ জন গ্রাহকের কাছে বিক্রয় করার পর পরবর্র্তীতে এই ১৪ টি ফ্লাট নানা কৌশলে আরও ১৭ জনের কাছে বিক্রয় করেছেন নাজরানা হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী এহসান উদ্দিন। এখন ৩১ ক্রেতাই ঢকার আদালতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছেন।'
সূত্র অনুসারে, ফ্ল্যাট কিনে বুঝে না পওয়ার অভিযোগে ঢাকার সালিশি ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ৯৮০টি অভিযোগ নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের পেশকার জাহিদ হোসেন জানান, এসব অভিযোগের বিপরীতে বিভিন্ন ফ্ল্যাট ক্রেতার প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আটকে আছে।
তিনি বলেন, 'গত তিন মাস ধরে ট্রাইব্যুনালে কোনো বিচারক নেই বলে কার্যক্রম বন্ধ আছে। এছাড়াও গত তিন বছর ধরে এই ট্রাইব্যুনালে কোনো পৃথক বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।'
ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালত ও ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসুত্রে জানা যায়, ফ্ল্যাট কিনে প্রতারণার অভিযোগে প্রায় ২ হাজার মামলা রয়েছে। যার বিপরীতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আটকা ফ্ল্যাট ক্রেতাদের।
হাইকোর্টে রিট
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে বিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড (বিডিডিএল) থেকে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন এস এম শাহাবুদ্দিন। সব টাকা পরিশোধ করে তিনি ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু আট বছর পর তিনি হঠাৎ দেখতে পান যে, তার ফ্ল্যাটটি ফার্স্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণের জন্য গোপনে বন্ধক হিসাবে দেখানো হয়েছে। সেই ঋণও শোধ করেনি বিডিডিএল। ফলে শাহাবুদ্দিনের কেনা ফ্ল্যাটটি এখন ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।
আবদুল হান্নান, বিউটি বেগম ও ইউসুফসহ আরও ৩১ জন ফ্ল্যাট মালিক একইভাবে বিডিডিএলের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ফার্স্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ৩১টি ফ্ল্যাটের নিলামের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ৩১টি ফ্ল্যাটের মালিকেরা ফ্ল্যাটের নিলাম বন্ধের জন্য হাইকোর্টে রিট করেন।
আবেদনকারীদের আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন জানান, হাইকোর্ট নিলাম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার চারটি অর্থঋণ আদালতে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ১০০টি মামলা রয়েছে। কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যাংকগুলো ২ হাজার কোটি টাকার বেশি পায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, বিডিডিএলের ঘটনার মতো ফ্ল্যাটের নিলাম বন্ধে প্রায় ৬০০ রিট বিচারাধীন রয়েছে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সূত্রে জানা গেছে, ক্রেতাদের হাতে ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করার জন্য সংগঠনটির কাছে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ অভিযোগ এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১১ সাল থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার অভিযোগের নিষ্পত্তি করেছে রিহ্যাব।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলআমিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'প্লট কেনার পর ক্রেতারা যে কোম্পানিগুলোকে প্রতারিত করেছে, তাদের কেউই আমাদের সদস্য নয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।'
তিনি আরও বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে এসব প্রতারক কোম্পানির হাত থেকে ক্রেতাদের রক্ষা করা সম্ভব।