ফার্মা খাতের সামনে পরবর্তী আরএমজি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে: ডিসিসিআই সেমিনারে বক্তারা
বর্তমানে বার্ষিক দুইশ মিলিয়ন ডলারের নিচে ওষুধ রপ্তানি হলেও আগামী পাঁচ বছর নাগাদ এই রপ্তানির পরিমাণ পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ফার্মাসিউটিক্যালস খাত নিয়ে ডিসিসিআই ভবনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
"এক্সপোর্ট অফ ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর আপ'ন এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন: স্ট্র্যাটেজিস এন্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড" শীর্ষক ওই সেমিনারে এ খাতের উদ্যোক্তা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের এ খাত কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে তা তুলে ধরার পাশাপাশি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বিশেষ অতিথি হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের সামনে আরেক তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সালমান এফ রহমান ওষুধের রপ্তানি বাড়াতে সাধারণ ওষুধের বাইরে বায়োলজিক্যাল ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানিতে বেশি গুরুত্ব দিতে বলেন।
ট্রিপস (ট্রেড রিলেটেড অ্যাস্পেক্টস অফ ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস)- এর আওতায় ওষুধ উৎপাদনে পেটেন্ট মানার শর্ত ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য শিথিল থাকলেও ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর থেকেই এই শর্তও মানতে হবে।
ফলে বাংলাদেশের কোন ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে এই শর্ত মানতে হলে মূল কোম্পানির কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে পেটেন্ট ক্রয় করতে হবে। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।
আলোচনায় বক্তারা এখন থেকেই ওষুধের কাঁচামাল বা একটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্ট (এপিআই) দেশেই ব্যাপকভাবে তৈরির উপর গুরুত্ব দেন। এ লক্ষ্যে মুন্সিগঞ্জে এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপন নিয়ে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আলোচনা হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি।
এদিকে ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সরকারের অংশীদার হিসেবে ইতোমধ্যে বেসরকারি খাত অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
এই খাতের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করতে বিভিন্ন অংশীদারের অংশগ্রহণে পরামর্শ সভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান তার মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস খাত প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৯৭% পূরণ করে থাকে।
তিনি বলেন, "২০২১-২২ অর্থবছরে ফার্মা পণ্যের রপ্তানি ছিল ১৮৮.৮ মিলিয়ন ডলারের। ২০২১ সালে ওষুধ রপ্তানির বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬৭তম। তবে এপিআইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আমদানির উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।"
এদিকে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশ ৮%-১৫% পর্যন্ত উচ্চ শুল্ক ব্যবস্থার সম্মুখীন হবে যা ৫.৭৩ বিলিয়ন ডলারের ১৪.২৮% রপ্তানি আয় হ্রাস করতে পারে।