এক মাসে তৃতীয়বারের মতো কমলো টাকার মান, নতুন বিনিময় হার ৯৪.৭০
এক মাসে তৃতীয়বারের মতো ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। এবার ২৫ পয়সা কমেছে টাকার মান।
সোমবার নতুন আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ৯৪.৪৫ থেকে বাড়িয়ে প্রতি ডলার ৯৪.৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নতুন দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ১৩২ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি হয়েছে।
এর আগে গত বৃহষ্পতিবার (২১ জুলাই) ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৫০ পয়সা কমিয়ে ৯৪.৪৫ টাকা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক কার্যদিবসের ব্যবধানে ডলারের দাম ফের বাড়ানো হলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ডলারের প্রকৃত দামের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্যই এভাবে টাকার মান কমানো হচ্ছে। মূলত জ্বালানী, বিদ্যুৎ, খাদ্যপণ্য, সরকারি ক্রয়সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি এলসি সেটেলমেন্ট করতে ব্যাংকগুলোকে ডলার সাপোর্ট দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় মাসে টাকার মান কমেছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা।
জুনের শুরুতে আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ছিল প্রতি ডলার ৮৯ টাকা।
দ্রুত অবমূল্যায়নের পরেও বাজারে ডলারের হার এখনও খুব বেশি হওয়ায় সোমবার প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১০৪ টাকায় এলসি (লেটার অফ ক্রেডিট) পেমেন্ট নিষ্পত্তি করতে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।
যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি ব্যাংকের একজন শীর্ষ নির্বাহী বলেন, বেশিরভাগ ব্যাংক ১০২ টাকায় এলসি নিষ্পত্তি করেছ। কিন্তু ৫ লাখ ডলারের বেশি এলসি ১০৪ টাকায় নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
ব্যাংকারদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এদিন কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ১০৬ থেকে ১০৭ টাকার মধ্যে ছিল।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, নতুন আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে কয়েকমাস আগে খোলা এলসির সেটেলমেন্টের প্রেশার এখন আসছে।
"বাজারে ডলারের সংকটও আছে। এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে অনেক বেশি দামে আমাদের ডলার সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এসব কারণে এলসি সেটেলমেন্টের ক্ষেত্রেও আমাদের দাম বাড়াতে হয়েছে," বলেন তিনি।
কার্ব মার্কেটে ডলার সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা
কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম উঠেছে এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা। এছাড়া মানি চেঞ্জারগুলো ১০৫-১০৫.৫০ টাকা রেটে ডলার কিনেছেন। আগের দিন রোববার ১০৫ টাকায় উঠেছিল ডলারের বাজার। গতকাল সোমবারের আগে এটিই ছিল কার্ব মার্কেটে উঠা ডলারের সর্বোচ্চ দাম। একদিনের ব্যবধানে নতুন রেকর্ড করলো কার্ব মার্কেটে ডলার।
রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকার মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ডলার না থাকার কারণে অনেক ব্যবসায়ী ১০৬ টাকা দামেও ডলার বিক্রি করতে চাইছেন না। তারা ডলার বিক্রির জন্য ১০৭ টাকার মতো দাম চাইছেন। ১০৫-১০৬ টাকা দিয়েও সেভাবে ডলার কিনতে পারছেন না বলে জানালেন তারা।
আমদানি কমে যাওয়ার কারণে গতবছরের আগস্টে ৪৮ বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করে রিজার্ভ। তবে পরবর্তীতে আমদানি বেড়ে যাওয়াসহ বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি মূল্য পরিশোধে গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরেও ডলার বিক্রির এ ধারা অব্যাহত আছে। এসব কারণে রিজার্ভ কমে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
নিয়মিত মনিটরিং এর পাশাপাশি আমদানিতে রাশ টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। গাড়ি, ফ্রিজসহ ২৭টি পণ্য আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু পণ্যের আমদানি শুল্কও বাড়ানো হয়েছে।
একইসঙ্গে বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়াতেও চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে এক্সপোর্টার্স রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) অ্যাকাউন্টে জমা রাখার লিমিট অর্ধেক করা, ব্যাংকের ডলার ধারণের সীমা (এনওপি) কমানো এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তও নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।