রপ্তানি আয় দেশে আনার বর্ধিত সময় পাবেন রপ্তানিকারকেরা
বর্তমানে নিয়ম অনুযায়ী, পণ্য রপ্তানির পর ১২০ দিনের মধ্যে রপ্তানি মূল্য দেশে প্রত্যাবাসন করতে হলেও– সেটি বাড়িয়ে ২১০ দিন করতে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়বে। ফলস্বরূপ শক্তিশালী হবে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ।
ফরেক্স রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি কর্মরতদের পাঠানো রেমিট্যান্সে-ও নগদ প্রণোদনা দেবে সরকার। একইসঙ্গে, ৩৬০ দিনে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির মূল্য পরিশোধের 'ইউসেন্স পিরিয়ড' আরও ছয় মাস বাড়ানো হচ্ছে।
এসব ঘোষণা দিয়ে খুব শিগগিরই তিনটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, বাংলাদেশের নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিকেএমইএ'র অনুরোধের প্রেক্ষিতে রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিদেশি বায়াররা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পণ্য রপ্তানির ৯০-১২০ দিনের মধ্যে চালানের মূল্য পরিশোধ করে। কিন্তু, বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কার মধ্যে অনেক বায়ার অতিরিক্ত সময় দাবি করছে বলে জানান বিকেএমইএ'র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি বলেন, 'এমনিতেই রপ্তানি কার্যাদেশ প্রায় ৩০% কমে গেছে। রপ্তানি মূল্য পরিশোধে বায়ারদের চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি সময় দিতে না পারলে, তা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে'।
সাপ্লায়ারস অথবা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায়- শিল্পের কাঁচামাল, কৃষি যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক সার আমদানির মূল্য পরিশোধ করতে হতো ১৮০ দিনের মধ্যে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই সময়সীমা বাড়িয়ে ৩৬০ দিন করে, যার মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হবে।
জানুয়ারিতে ইউসেন্স পিরিয়ড ২৭০ দিন থেকে কমিয়ে ১৮০ দিন করা হয়। কিন্তু, জুলাইয়ে তা বাড়িয়ে ৩৬০ দিন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রপ্তানিকারকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে, এ সুবিধাটির সময়সীমা আরও ছয় মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আমদানিকারকদের এক বছর পর ঋণপত্র (এলসি) মূল্য পরিশোধের সুযোগ দিলে– তাতে করে আপাতত সাময়িকভাবে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪.৩ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ), শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ঋণ এবং অন্যান্য খাতে খরচ করা রিজার্ভ বাদ দিলে– এর নেট পরিমাণ ২৬.৩ বিলিয়ন ডলার। আমদানি-রপ্তানির ঘাটতি মেটাতে প্রতিমাসে রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার বিক্রি করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আমদানি মূল্য পরিশোধে দেরি করা গেলে এবং রপ্তানি প্রত্যাবাসনের সময় বাড়িয়ে আরও কার্যাদেশ পাওয়া গেলে– তা রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক অবদান রাখবে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ইউসেন্স পিরিয়ড বাড়ানোর সুবিধা-অসুবিধা দু'টোই রয়েছে। 'এটি চলমান ডলার সংকটের সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে কিছুটা চাপমুক্ত রাখলেও– যখন এসব এলসির পেমেন্ট করতে হবে– তখন রিজার্ভের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি হবে'।
ওই কর্মকর্তা আরও মনে করেন, মূল্য পরিশোধের সময় বাড়ানো হলে দেশের আমদানিকারকদের সরবরাহকারীদের সাথে দর কষাকষির সক্ষমতাও কমবে।
তবে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে একমত নন মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, 'বাকিতে আমদানি করলেই সাপ্লায়ারকে বেশি মূল্য দিতে হবে, তা ঠিক নয়। যেসব সাপ্লায়ার ৩৬০ দিন পরে মূল্য নিতে রাজি হবে, তাদের কাছ থেকেই কাঁচামাল আমদানি করব আমরা'।
এদিকে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে বর্তমানে প্রতি ডলার ১০৭ টাকা দরের পাশাপাশি ২.৫০% হারে নগদ প্রণোদনা পাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা। কিন্তু, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরতরা নগদ প্রণোদনা পান না, তাদের জন্য ডলার রেটও বেশ কম।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে এখন থেকে অন্যদের মতো তাদেরকেও একই হারে নগদ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।